• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

করোনা মোকাবিলায় কুয়েট শিক্ষার্থীর ফেসশিল্ড

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২০  

মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সরঞ্জাম ফেসশিল্ড। পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্টের (পিপিই) সম্পূর্ণতার জন্য এটি অত্যাবশকীয়।

চিকিৎসকদের মতে, মানসম্পন্ন ফেসশিল্ড ছাড়া করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া নিরাপদ নয়। অথচ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে রপ্তানিকারক দেশগুলো সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে ব্যক্তি উদ্যোগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ফলাফল প্রত্যাশী সুমিত চন্দ স্থানীয় উপকরণ দিয়েই ফেসশিল্ড তৈরি করছেন।

ইতোমধ্যে তিনি এ ফেসশিল্ড খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মোংলা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিয়েছেনও। কুয়েটের এ শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলার শেলাবুনিয়ায়। তিনি মোংলার বাসায় বসে এই ফেসশিল্ড তৈরি করছেন।

তিনি বলেন, এবারের বাংলা নববর্ষটা একটু অন্যভাবেই কাটালাম। বাসায় বসেই আমাদের ডাক্তারদের জন্য প্রায় ১০০ পিস ফেসশিল্ড তৈরি করেছি। নববর্ষের তিনদিন আগে কাঁচামালগুলো রেডি করে কাজ শুরু করে টানা নির্ঘুম কাজ করেছি যাতে এলাকার হাসপাতালগুলো এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সাপ্লাই দেওয়া যায়। 

‘করোনা ভাইরাসে ডাক্তারদের সংক্রমণ রোধে পিপিইর সঙ্গে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেফটি টুল। করোনা নিয়ে কাজ করছি জেনে ডাক্তার বন্ধু অর্ণব খান খবর দিল খুলনা ও মোংলার স্বাস্থ্যকর্মীদের জরুরিভিত্তিতে ফেসশিল্ড দেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল স্যারের ব্লগ থেকে আইডিয়া নিয়ে প্রাক্তন মোংলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলমকে জানাই লকডাউন অবস্থায় কাঁচামালগুলো সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য। স্যার সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়ে ডোনারও ম্যানেজ করে দু’দিনেই কাঁচামালগুলো সংগ্রহ করিয়ে দিলেন। এরপর কিছু প্রসেসিং কাজের ব্যাপারে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই রুবেল সানা রিস্ক নিয়ে দোকানে এসে করে দিলেন। তারপর যত দ্রুত সম্ভব টানা কাজ করে ফেসশিল্ডগুলো করতে পেরে অনেক বেশি প্রশান্তি লাগছে।

‘কতটা মেডিক্যাল গ্রেড হয়েছে জানি না, তবে স্থানীয়ভাবে যা যা পাওয়া গেছে সেটা দিয়ে চলার মতো হয়েছে জিনিসগুলো। বেশি কষ্ট হয়েছে হট এয়ার গান না থাকায় খালি হাতেই পোড়া খেয়ে খেয়ে গ্যাস বার্নারে এতগুলো পিভিসি বাঁকাতে। মোংলা পোর্ট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেনের ছেলে শাহীন সাইফুল্লাহ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমেরিকা প্রবাসী এক চিকিৎসকের আর্থিক সহযোগিতায় এ ফেস শিল্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে। তারা যে অর্থ দিয়েছেন তাতে ২৫০টি ফেসশিল্ড করা সম্ভব।

এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, কেউ খুলনা, মোংলা, বাগেরহাটে ওএইচপি শিট সাপ্লাই দিতে পারলে আরো ভালো ফেসশিল্ড বানানো যাবে। কিছু শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে একটি দল গঠন করে আগামী দিন চারদিনের মধ্যে ১ হাজার পিস ফেসশিল্ড তৈরির কাজ করছি।

তিনি এ অবস্থায় পকেটের অল্প কিছু সেভিংস খরচ করা ছাড়াই এগুলো করতে পারার জন্য ডোনারসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সুমিত চন্দ বলেন, নববর্ষ আগের বছরের মতো না কাটলেও এভাবেও খুব ভালো লাগছে। ডাক্তারদের মতো ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধে যেতে না পারলেও ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র হিসেবে পেছন থেকে ক্ষুদ্র পরিমাণ সাপোর্ট দিতে পারছি তাদের। করোনা মোকাবিলায় তিনটা প্রজেক্টে কাজ করছি, তার মধ্যে এটাই প্রথম বাস্তবে রূপ নিলো।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) উপাধ্যক্ষ ডাক্তার মেহেদী নেওয়াজ  বলেন, বৃহস্পতিবার কুয়েটের শিক্ষার্থীর তৈরি ৫০টি ফেসশিল্ড পেয়েছি। স্থানীয় উপকরণ দিয়ে ফেসশিল্ডগুলো ভালোই করেছে। কাজ চালানো যাবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা