• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

কম দামে দ্রুত যে টিকা পাওয়া যাবে,সেটাই নেওয়া হবে:স্বাস্থ্যমন্ত্রী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২০  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য যে ভ্যাকসিনটি কম দামে দ্রুত পাওয়া যাবে, সেটি বাংলাদেশে আনা হবে। তবে ভ্যাকসিনটির সক্ষমতা বাংলাদেশের সঙ্গে কতটা মিল রয়েছে সেটি দেখা হবে।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্র্যান্ড বল রুমে আজ রোববার বিকেল পৌনে তিনটার দিকে এক সেমিনার শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই সেমিনারে চিকিৎসকেরা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সচেষ্ট ছিলেন। করোনা মোকাবিলায় তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশে করোনার পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় এবং চিকিৎসকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় করোনা পরিস্থিতি আপাতত সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে চিকিৎসকসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) সম্পর্কে। এ নিয়ে সরকারের প্রস্তুতিও আছে।

সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ (এসওএসবি) ‘কোভিড-১৯ দুর্যোগে সার্জনদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারের সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। অল্প দিনের মধ্যেই জানা যাবে আমরা করোনার কোন ভ্যাকসিনটি নিতে যাচ্ছি, নিতে পারব। এটাও মনে রাখতে হবে, যে ভ্যাকসিনটি সুলভমূল্যে পাওয়া যাবে, তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে এবং এই দেশে ভ্যাকসিনটির সক্ষমতা মিল রেখে ভ্যাকসিনটি আনা হবে।’

দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গ্লোব বায়োটেকের টিকাটি ইতিমধ্যে ট্রায়াল-২ শেষ করেছে বলে জানা গেছে। এটি যদি কার্যকর হয়, তবে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। কোন ভ্যাকসিনটি নেওয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। কোনো কোনো উৎপাদক বলছে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির দিকে হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মে-জুনের দিকে ভ্যাকসিন আসতে পারে। ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে কিনা এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নেওয়া হবে, সেখানে ট্রায়ালের বিষয় যদি তাকে, অনুমতি চায়, তাহলে আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিব। আমরা সিনোভ্যাক টিকাকে ট্রায়াল করতে সুযোগ দিয়েছিলাম, অনুমোদন দিয়েছিলাম। তারা করেনি। এখনো ট্রায়াল করার সুযোগ আছে। অন্য যেকোনো কোম্পানি যদি এগিয়ে আসে আমরা যদি দেখি কার্যকরী তাহলে আমরা অনুমোদন দেব।’

এর আগে সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘কোভিড মোকাবিলায় সেকেন্ড ওয়েভ (দ্বিতীয় ঢেউ) নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতিও আছে। যদি সত্যি সেকেন্ড ওয়েভ আসে আমরা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারব।’

সভাপতির বক্তব্যে সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের (এসওএসবি) সভাপতি এ এইচ এম তৌহিদুল আলম বলেন, করোনার সময়ে মহামারি এলেও চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করেছে। তাঁরা ভবিষ্যতেও এভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পরে অনেক মেডিকেলে কলেজে সার্জনের নতুন পদ তৈরি হয়নি। অনেক মেডিকেলে কোর্স বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষক নেই বলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়লেও শিক্ষক নেই। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এসব বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।সেমিনারের শুরুতে করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর সূচনা বক্তব্য দেন এসওএসবি-এর সাবেক সভাপতি জুলফিকার রহমান খান। অনুষ্ঠানে ‘কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক সার্জারি গাইডলাইন ২০২০’ প্রকাশিত হয়।

এরপর ‘কোভিড-১৯ দুর্যোগে সার্জনদের ভূমিকা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এসওএসবি-এর সাধারণ সম্পাদক মো. নূর হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে করোনার শুরু থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী, মাস্ক দিয়ে কাজে সহযোগিতা করা হয়। করোনা মোকাবিলায় সার্জন চিকিৎসকদের জন্য একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। করোনা রোগীদের সবচেয়ে কাছে গিয়েছে সার্জন চিকিৎসকেরা। তাই সার্জনরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা ও হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা-এই তিনটি সঠিকভাবে মেনে চললেই করোনার প্রকোপ থেকে দূরে থাকা যাবে। করোনা শনাক্তের জন্য র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি এম ইকবাল আর্সলান বলেন, কোভিড মোকাবিলায় চিকিৎসক সমাজ যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। করোনার সময়ে চিকিৎসার ত্রুটি, বিচ্যুতি, সমালোচনা ও সমন্বয়হীনতা অনেক কিছু ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগুলো সামলানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা আসার পর যেসব দেশ প্রথমে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সেসব দেশে আবার করোনা বেড়েছে। এদিকে দেশে শীতে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার একটা ঢেউ আসতে পারে।

সে নিয়ে প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের।অনুষ্ঠানে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরো পৃথিবীর কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা এই সময়ে যুদ্ধ করেছেন। চিকিৎসকদের যাঁদের হারিয়েছি, তাদের স্মরণ করছি। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ কোভিডের শুরু থেকে যত ওষুধ প্রয়োজন ছিল, তা সহজলভ্য ছিল।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, করোনার সময়ে চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। তবে তাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। বিএমএ সাধারণ সম্পাদক মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনায় সারা দেশে ১০২ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। তবু চিকিৎসকেরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মো. আবদুল আজিজ, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের সহ সভাপতি এ জেড এম মোসতাক হোসেন, স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা