• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

এতিম হয়েও যাঁরা বিশ্ববরেণ্য

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৯  

এতিম মানেই অবহেলার পাত্র নয়। বরং তাদের অবহেলা করা, তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বনি ইসরাইলদের যেসব কারণে শাস্তি দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল এতিমের হক আদায় না করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন বনি ইসরাইলের অঙ্গীকার নিয়েছিলাম, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না। মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের প্রতি সদয় আচরণ করবে। মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে। সালাত কায়েম করবে। জাকাত দেবে। কিন্তু অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া তোমরা বিরুদ্ধভাবাপন্ন হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৮৩)

পবিত্র কোরআনের ১২ নম্বর সুরার ২২ আয়াতে এতিম সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনে এতিম শব্দটি একবচনে এসেছে আটবার। দ্বিবচনে এসেছে একবার। আর বহুবচনে এসেছে ১৪ বার। সে হিসেবে কোরআনে এতিম শব্দটি ২৩ বার ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে বিশ্বজয়ী এতিমদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো—

 

হজরত মুহাম্মদ (সা.)

পৃথিবীর ইতিহাসে যেই এতিমকে মহান আল্লাহ সর্বোচ্চ সম্মান দান করেছেন, তিনিও নবুয়তের দায়িত্ব পালন করেছেন ২৩ বছর। তিনি ছিলেন রহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মদ (সা.)। যাঁর সংস্পর্শে জাহেলি যুগের বর্বরতম মানুষেরা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে। তাই ইসলামে এতিমের প্রতি সদয় আচরণের প্রতি বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছু তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না। আর মাতা-পিতা, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)

 

ঈসা (আ.)

শুধু তা-ই নয়, বনি ইসরাইল বংশের শেষ নবী ঈসা (আ.)-ও ছিলেন পিতৃহীন। সে হিসেবে তাঁকেও এতিমই বলা যেতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত হলো আদমের মতো। তাকে তিনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন এবং বলেন, হয়ে যাও, ব্যস হয়ে গেল। যা তোমার প্রভু আল্লাহ বলেন, সেটাই সত্য। অতএব তুমি সংশয়বাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৫৯-৬০) অর্থাৎ আদম (আ.)-কে যেমন পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করা হয়েছে। তেমনি ঈসা (আ.)-কেও সৃষ্টি করা হয়েছে বাবা ছাড়া।

 

মুসা (আ.)

আল্লাহর প্রেরিত অন্যতম নবী ও রাসুল মুসা (আ.) ছিলেন একজন এতিম। মহান আল্লাহ তাঁর দায়িত্বভার দিয়েছিলেন তাঁর মায়ের ওপর। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আমি মুসার মায়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম, তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে। আর তুমি ভয় করবে না এবং চিন্তা করবে না। নিশ্চয়ই আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত করব।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭)

সেই এতিম মুসা (আ.)-কে মহান আল্লাহ লালন-পালন করিয়েছেন চিরশত্রু ফেরাউনের ঘরেই। পবিত্র কোরআনে তাঁর বাবার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কারণ তিনি প্রতিপালিত হয়েছিলেন এতিম হিসেবে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমরা জানতে পারলাম, মহান আল্লাহ প্রদত্ত অন্যতম চারটি আসমানি কিতাবের তিনটির বাহকই ছিলেন এতিম। তাঁরা ছাড়াও পৃথিবীতে এমন বহু মনীষী ছিলেন, যাঁরা এতিম হয়েও দুনিয়া পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

যেমন—ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এতিম ছিলেন। হাম্বলি মাজহাবের প্রণেতা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-ও এতিম ছিলেন।

বিশিষ্ট হাদিসবিশারদ ইমাম বুখারি (রহ.) ও হাদিস ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজর আসাকালানি (রহ.) প্রমুখ ছিলেন এতিম। আরবের বিখ্যাত কবি মুতানাব্বির শৈশব কেটেছে পিতার আদর ছাড়াই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন, ১৬তম রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন, অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, জেমস বন্ড প্রমুখও ছিলেন এতিম।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা