• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

একই পরিবারের তিনজনকে জোর করে মল খাওয়ানোর অভিযোগ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২০  

শরীয়তপুরের জাজিরা উপেজলায় তাবিজ-কবজ ও কালো জাদু করে মানুষকে ক্ষতি করছে- এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে একই পরিবারের তিনজনেক ৩ বোতল মানুষের মল খাওয়ানোর অভিযাগ উঠেছে এলাকার কিছু দুষ্ট লোকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে জাজিরা উপেজলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে  চিকিৎসাধীন আছেন এক কলেজছাত্রী। সোমবার (১২ এপ্রিল) রাতে জাজিরা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এর আগে শনিবার (১১ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিক উপেজলার মূলনা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের লাউখোলা চর বালিয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সাথে জড়িত হাফিজ শিকদার নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

জাজিরা থানা পুলিশ, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জাজিরা উপজেলা বালিয়াকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক নুরুল হক আকন (৪২) তাবিজ-কবজ ও কালো জাদু করে মানুষকে ক্ষতি করছে- এমন অপবাদ দিয়ে বিকনগর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া তার ১৯ বছেরর মেয়ে ও তার মা জমিলা বেগমকে (৫৫) গত শনিবার (১১ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিক তিন বোতল মানুষের মল খাওয়ায়। একই গ্রামের জলিল ডাক্তার শিকদার, আমজাদ কাজি, মিজানুর মাদবর, ইদ্রিস বেপারী, ইউনুস কাজী, সিরাজ কাজী, আনোয়ার আকনসহ বেশ কয়েকজন মিলে এই কাজটি করে। এ ঘটনার পর ওই কলেজছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে জাজিরা উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। একই হাসপাতালে নুরুল হক আকন ও তার মা জমিলা বেগমকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় রবিবার জাজিরা থানায় একটি মামলা হয়েছে। 

ভ্যানচালক নুরুল হক আকন বেলন, চক্রান্ত করে, মিথ্যা অপবাদ দিয় আমাদের এলাকার প্রভাবশালী জলিল শিকদার, হাফিজ শিকদার, আমজাদ, মিজানুর, ইদ্রিস, ইউনুস, সিরাজ, আনোয়ারসহ বেশ কয়েকজন লোক শনিবার ভোরে আমার বাড়িতে আসে। আমাকেসহ পরিবারের সকলেক ঘুম থেকে ডেকে তোলে তারা। এরপর উঠানের মাঝখানে নিয় জোরপূর্বক কুরবানির পশুর মতে মাটিতে শুইয়ে আমার মা, মেয়ে ও আমাকে তিন বোতল মল খাওয়ায়। পরে চিৎকার করলে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় আমার মেয়েকে জাজিরা হাসপাতালে ভর্তি করে। আমরাও প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। আমি বিচার পাওয়ার জন্য রবিবার থানায় মামলা করেছি। 

নুরুল হক আকনের মেয়ে কলেজছাত্রী বলেন, আমি জাজিরা বিকনগর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। আমার জীবেন কোনো খারাপ রেকর্ড নেই। কলেজে ও এলাকায় আমি সবার সামনে মুখ দেখাব কিভাবে? ঘটনার পর আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এ জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।

আসামি জলিল শিকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এলাকার আনোয়ার আকনের শ্যালককে কালো জাদু করে মেরে ফেলেছে নুরুল হক আকন। তাই আনোয়ার আমাদেরকে এ কাজ করতে বলেছে। জাদু দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা যায় কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, একাধিক ফকিরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে, নুরুল হককে যদি মানুষের মল খাওয়ানো হয়, তাহলে সে আর কারো ক্ষতি করতে পারবে না। তাই তাকে মানুষের মল খাওয়ানো হয়েছে।

মূলনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিষয়টি আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে শুনেছি। ঘটনার আগে বা পরে কেউ এ বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেনি। তবে ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়, এর একটি কঠিন বিচার হওয়া দরকার।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, জাদু করে কাউকে মেরে ফেলা যায়, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে মানুষের মল খাওয়ানো হয়েছে এমন এক কলেজছাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, মূলনা ইউনিয়নের একটি পরিবারকে মানুষের মল খাওয়ানো হয়েছে এবং একটি মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঘটনার পর তাৎক্ষণিক এলাকায় পুলিশ পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় নুরুল হক আকনসহ সাতজনেক আসামি করে থানায় একটি মামলা করেছে। আসামিদের মধ্যে হাফিজ শিকদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা