• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

এক বিঘা জমির পাটে ২৭ টন অক্সিজেন!

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২০  

পাটের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে কাঁচা পাট গাছ নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। অন্য উদ্ভিদের চেয়ে পাট গাছ থেকে বেশি অক্সিজেন পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া

বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) জাতীয় পাট দিবসের এক সংবাদ সম্মেলনে সচিব পাটের নানাবিধ ব্যবহার ও উপকার নিয়ে কথা বলেন পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও সচিব।
 
পাটের পাতার শাখা থেকে শুরু করে পাটের ছাল-বাকল, কাঁচা পাট সবকিছুই ব্যবহার করা যায়; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও পাট গাছের ভূমিকা অনন্য বলে জানান সচিব।
 
সচিব বলেন, মাত্র তিন মাসে পাট উৎপাদন করা সম্ভব। এক বিঘা জমির পাট ২৭ মেট্রিকটন অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই রুমে পাট দিয়ে ডেকোরেশন করা থাকলে কেউ ধূমপান করলেও অ্যাবজার্ভ করবে, পরিবেশবান্ধব।
 
জৈব ভেষজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাট পাতার গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, পাট পাতার পানীয় পরীক্ষিত। এটা অলরেডি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। জার্মানি থেকে আমরা সনদ পেয়ে যাবো, তখন ব্যাপকভাবে মার্কেটিং করবো। ইতোমধ্যে আমরা ৫০ লাখ টাকার পাট পাতা কিনেছি।
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে পাটকাঠি থেকে চারকোল, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল, পাট পাতার পানীয় উৎপাদন, জুট জিও-টেক্সটাইল, পলিথিনের বিকল্প ‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদনের মাধ্যমে পাটখাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।
 
সচিব বলেন, পাটের বিকল্প সোনালি ব্যাগ আগামী দুই মাসের মধ্যে এক লাখ পিস সরবরাহ করবে। বাজারের চাহিদা ১০-২০ লাখ পিস। এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি।
 
মন্ত্রী জানান, গত পাট উৎপাদন মৌসুমে দেশে ৭৪ দশমিক ৪৬ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপাদন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যে ৬১৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গতবছর ছিল ৪৮২ কোটি মিলিন ডলার ছিল।
 
তিনি বলেন, আমরা পলিসি মেকার, পাটের চাহিদা বাড়ছে। আরো অনেক প্রাকৃতিক তন্তু আসছে, তারা যেন মার্কেট নিতে পারে। সেজন্য আমরা চেষ্টা করেছি পাটকে কীভাবে বহুমুখী ব্যবহার করা যায়। আমি এসে প্রথমবারেই এত বেড়েছে।
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুট ডাইভার সিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেপিডিসি) মাধ্যমে ৭০০ উদ্যোক্তা ২৮২ প্রকার দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছে, যার অধিকাংশই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
 
বর্তমানে ৫২টি দেশে পাটপণ্য রপ্তানি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস সারা পৃথিবীতেই পাটপণ্য চলে যাবে। নারীরাই পাটপণ্য বেশি কেনে। আমার স্ত্রীও ব্যাগ কিনেছে মেলা থেকে। এজন্য দেশের মধ্যে আরো মেলা করতে হবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উন্নয়ন জংশন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ জাতির পিতার সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান (নিরাপদ ব-দ্বীপ) ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সার্বিক পাটখাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
 
পরিবেশ দূষণরোধ ও পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বাড়াতে সরকার ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ ও এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করে। এ আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালার আওতায় ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়া, পোল্ট্রি ও ফিশফিডসহ ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
 
আইনের বিধান অমান্যকারীর শাস্তি অনধিক এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদলত পরিচালিত হচ্ছে। এসব পদক্ষেপের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা বেড়েছে। পলিথিনসহ বিভিন্ন সিনথেটিক ব্যাগ ব্যবহারের মাত্রা হ্রাস পাওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক দূষণ প্রশমিত হচ্ছে।

চালের বস্তায় পলিথিনের ব্যবহার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইনে এখন কোনো জায়গায় চালের বস্তা প্লাস্টিকে নেই। আপনি যদি বলেন এই জায়গায় চালের বস্তা প্লাস্টিকে আছে, আমরা এখনই সঙ্গে সঙ্গে ওয়ান দ্য মিনিট টেক অ্যাকশন।
  
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাটচাষের উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে চাষিরা প্রশিক্ষিত হবেন এবং সর্বিকভাবে গুণগত মানসম্মত পাট ও পাটবীজ উৎপাদন বহুলাংশে বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।

 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা