• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

উপকূলে বাড়ছে পর্যটনের সম্ভাবনা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত জেগে উঠেছে উপকূলে। অর্থনৈতিক অঞ্চল, মৎস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে দেশের পর্যটন খাতেও উপকূলীয় অঞ্চলগুলো রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পিছিয়ে নেই মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল। মেঘনার তীর এখন অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্রের হাতছানিতে বৈচিত্র্যময়। শহরের যান্ত্রিকতায় আটকে পড়া জীবনে একটু বিশ্রাম বা সতেজতার ছোঁয়া আনতে কার না মন চায়? পর্যটক, ভ্রমণপিপাসু কিংবা প্রকৃতিপ্রেমী- যাই বলুন, এসব দর্শনীয় স্থানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঈদ এবং বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্র করে ভিড় জমে দর্শনার্থীর। এমনকি এসব স্থানের অদূরে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ-চরে নদীর উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়েও অজানাকে জানতে ছুটে যান তারা। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে মাঝি, জেলেদের জীবনের চালচিত্র। দ্বীপ-চরের সৌন্দর্যও নজর কাড়ার মতো। মনোমুগ্ধকর এ উপকূলে একটু ভোগান্তি সহ্য করে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারলেই মেলে প্রশান্তির পরশ। বাংলার বুকে এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে পেরে মুগ্ধ হয়ে অনেকে গর্বও করেন জন্মভূমিকে নিয়ে! কোথাও ধু ধু চর। কোথাও মন কেড়ে নেয়া সবুজ তেপান্তর। কোথাও ঝাউবন, নারকেল-সুপারির বাগান। কোথাও আবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো ঢেউ এসে কূলে আছড়ে পড়ছে। কূল থেকে চোখ মেললে মেঘনায় ইলিশ শিকার করতে নদীর সঙ্গে জেলেদের লড়াইয়ের দৃশ্য দেখা যাবে খুব কাছ থেকে। দু’মুঠো ভাতের জন্য যেখানে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষ। এসবই পর্যটকদের নাড়া দেয়। পাঠক, এবার চলুন, জেনে নিই মেঘনাতীরের দর্শনীয় স্থানগুলোর অবস্থান ও সৌন্দর্যের গল্প। মেঘনাতীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলা। এ তিনটি জেলার প্রান্তিকের মেঘনাতীরেই মূলত দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় জমে।

ভোলা : ভোলাকে ‘দ্বীপ জেলা’ বলা হয়। এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে দ্বীপ মনপুরা। সমগ্র দ্বীপই পর্যটন অঞ্চল। তবে মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন ও চরফৈজুদ্দিন প্রজেক্ট পর্যটকদের বিনোদনের অন্যতম স্থান। জেলা সদরের তুলাতলী, বাঘমারা ব্রিজ, সরকারি স্কুল মাঠ, জেলা পরিষদ চত্বর, খেয়াঘাট ব্রিজেও প্রতিনিয়ত লোক সমাগম ঘটে। জ্যাকব টাওয়ারের কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। এটি ভোলার চর ফ্যাশনেই অবস্থিত। ওখানে আরো আছে শেখ রাসেল ডিজিটাল পার্ক, ফ্যাশন স্কয়ার, বেতুয়া ও কুকরি-মুকরি। বোরহানউদ্দিনের তেঁতুলিয়া রিভার ইকো পার্ক, হাকিমুদ্দিন মেঘনাপাড়ে অসংখ্য মানুষ প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে ছুটে আসেন।
 

লক্ষ্মীপুর : যেখান থেকে মূল মেঘনার উৎপত্তি, সে জেলার নাম লক্ষ্মীপুর। ‘নারকেল-সুপারি ভরপুর, সয়া-ইলিশের লক্ষ্মীপুর’ জেলার স্লোগানটির দিকে দৃষ্টি ফেরালে বোঝা সহজ হবে লক্ষ্মীপুর আসলে কেমন জনপদ। এ জেলার পুরো উপকূল এখন পর্যটনের সাজে সেজেছে। জেলার মতিরহাট মেঘনা সৈকত। এ সৈকতকে ‘মিনি কক্সবাজার’ বলা হয়। মেঘনার উত্তাল ঢেউ, দক্ষিণ থেকে আসা নির্মল বাতাস উপভোগ, মেঘনার কূলে বেলাভূমি ও সবুজে মোড়ানো তেপান্তরে হাঁটতে সুবিধার কারণে পর্যটকদের কাছে দিন দিন একটি জনপ্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে মতিরহাট।শুধু এখানেই শেষ নয়। মতিরহাটসংলগ্ন মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ শামছুদ্দিনে নৌকায় ঘুরতে যান অনেকে, বিশাল নারকেল-সুপারির বাগানের দেখা মেলে সেখানে। আর মেঘনার বুকে দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মতিরহাট জামে কেন্দ্রীয় মসজিদটি এখন দ্বিতল ভবন। এছাড়াও রয়েছে মতিরহাট ইলিশ ঘাট। যা দেশের বৃহত্তম চারটি ইলিশ ঘাটের একটি। এ পর্যটন কেন্দ্রটিতে ঈদ-উৎসব, এমনকি অবসরে অহরহ পর্যটক ছুটে যান।

জেলার রামগতি উপজেলার মেঘনাতীরে অবস্থিত তেগাছিয়া বাজার ও স্লুইসগেট এলাকার গল্প অনেকেরই অজানা। এখানে রয়েছে মেঘনার সুবিশাল চর, মেঘনা সৈকতের পাশেই ঝাউগাছের বাগান এবং মেঘনার বুক চিড়ে জেগে ওঠা একটি ছোট্ট নদী। পর্যটকদের থাকার জন্য কোনো আবাসিক হোটেল না থাকলেও টিম নিয়ে ঘুরতে আসলে তাঁবু বানিয়ে ঝাউ বনের ভেতর রাত পার করা যায়। উপজেলার রামগতির হাট ও আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে নদী রক্ষায়। এখন এ দু’টি স্থানে পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। জেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে অদূরেই মজুচৌধুরীর ঘাট। যেখানে দুটো স্লুইসগেট ও প্রকৃতির মনোরম চিত্র উপভোগ করতে অনেকে আসেন। জেলার রায়পুরের মোল্লারহাট মেঘনাতীরের অপরূপ দৃশ্যও মানুষের মনকে সতেজ করে।
 

চাঁদপুর : চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত মোলহেড নদীবিধৌত চাঁদপুরের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। স্বচ্ছ জলরাশি, চলমান অসংখ্য যাত্রীবাহী নৌকা, লঞ্চ-স্টিমার এবং ছায়াঘেরা মোলহেড এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত লোক জড়ো হন। ঈদে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে এ জনপদ। জেলার হাইমচরের বিস্তৃত অংশজুড়েই রয়েছে মেঘনার কূল। হাইমচরের চর ভৈরবী ঘাট, আমতলী, চর ভাঙাসহ মেঘনাতীরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিনোদনের জন্য হাজার হাজার মানুষ আসেন। এখানে রয়েছে দ্বীপ হাইমচর। মূল ভূ-খণ্ড থেকে ট্রলার যোগে ঘণ্টাখানেক দূরত্বের পথ পাড়ি দিলে অসম্ভব সুন্দর এক জগতের দেখা মিলে।

 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা