• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

উন্নয়নের স্রোতধারায় ঢাকা আজ বদলে যাওয়া নগরী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের মেয়াদ ইতোমধ্যেই চার বছর পূর্ণ হয়েছে।  ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের পর ৬ মে শপথ নেন তিনি।  মেয়র নির্বাচনের আগে ও পরে নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত চার বছরে তার কার্যক্রমে আশার আলো দেখা গেছে। 

দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর অতিবাহিত, আপনার কাছে কেমন মনে হচ্ছে?

সাঈদ খোকন : শূণ্য তহবিল, খানা-খন্দে ভরা রাস্তাঘাট, আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া এবং নষ্ট/অকেজো সড়কবাতির কারণে অন্ধকারে ডুবে থাকা এ নগরীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম।  চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু করে গত চার বছরে উন্নয়ণকে দৃশ্যমান করা সম্ভব হয়েছে।  দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বিল বকেয়া থাকায় নগর ভবনের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উপক্রম হয়েছিল। 

এ রকম হাজারো সমস্যায় জর্জরিত ছিলো এ নগরী।  গত চার বছরে আমাদের নিরলস ও আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা আজ উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া এক নগরী।  উন্নয়নের ছোঁয়া এখন দৃশ্যমান।  দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকেই প্রতিটা মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়নকে দৃশ্যমান করতে সক্ষম হয়েছি এবং এগিয়ে যাচ্ছি।  প্রতিনিয়ত এ রকম অনেক প্রতিকূলতাকেই মোকাবেলা করে সংস্থাটিকে এগিয়ে নিচ্ছি এবং নেয়ার চেষ্টা করছি।

গত চার বছরে সফলতা পেয়েছেন কতটুকু?

সাঈদ খোকন: আজ থেকে চার বছর আগে সড়কের লাইট জ্বলত না।  বেহাল রাস্তাঘাট।  শূন্য তহবিল।  সব মিলিয়ে নাগরিক সেবা ছিল শূণ্যের কোঠায়। এক সময় বিভিন্ন অসামাজিক কাজ ও মাদকের আখড়ায় পরিণত হওয়া পার্ক ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করে বর্তমানে উন্নয়নের নির্মাণযজ্ঞ চলছে। বর্জ্যের ভাগাড় হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ নগরী অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা পরিচ্ছন্ন।  আধুনিক এসটিএস নির্মাণ, কর্মস্থলে ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করা, লাইভ মনিটরিং, নিবিড় তদারকি এবং নানা মোটিভেশনমূলক উদ্যোগ নেয়া হয়।  প্রথমত মৌলিক যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পরিকল্পনা নিয়েছি।  বর্তমানে এগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই ইতোমধ্যে সফলতা এসেছে।  আমার বাবা (প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) মেয়র থাকাকালে করপোরেশনের সমস্যা নির্ধারণ এবং সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা ও সমাধান করতে হবে সে অভিজ্ঞতা আমি তখনই নিয়েছি।

সিটি করপোরেশন ৪০০ কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলো- এ অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছেন।  বর্তমানে করপোরেশনের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন?

সাঈদ খোকন: সিটি করপোরেশনের আয়ের অবস্থা তেমন ভালো নয়।  রাজস্ব আয় সাড়ে ৩০০-৪০০ কোটি টাকা।  এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স ১৫০ কোটি টাকা।  তাছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে সরকার যে আয় করে তার ৬০ ভাগ আসে ঢাকা শহরের নাগরিকদের কাছ থেকে।

নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে?

সাঈদ খোকন : নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা অধিকাংশই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে স্মার্ট ও নিরাপদ নগরী, সবুজ ঢাকা, পরিচ্ছন্ন ঢাকা, বাসযোগ্য করা এবং যানজট, জলাবদ্ধতা, মশা নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস, মাদক ও বর্জ্যমুক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি রোধ, উন্নত রাস্তাঘাট, ফুটপাত দখলমুক্ত, সড়কবাতি, খাল উদ্ধার, পার্ক উন্নয়ন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তাসহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি প্রায় বাস্তবায়ন হয়েছে।  কিছু কাজ বাস্তবায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে।  এসবের বিচারের দায়িত্ব এখন নগরবাসীর।

নগরবাসীর সেবায় আপনার নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?

সাঈদ খোকন : অলিগলিসহ সর্বত্র এলইডি সড়ক বাতি স্থাপনের মাধ্যমে নগরীকে আলোয় আলোকিত করা; রাস্তা, ফুটপাথ নির্মাণ ও উন্নয়ন, অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের আখড়ায় পরিণত হওয়া পার্ক ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করেছি। বিশ্বমানের পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণ, অলিগলিসহ প্রতিটি রাস্তার উন্নয়ন, আধুনিক এসটিএস নির্মাণ, কর্মস্থলে হাজিরা নিশ্চিতকরণ, লাইভ মনিটরিং, নিবিড় তদারকি এবং নানা মোটিভেশনমূলক উদ্যোগ নিয়েছি।

এসবের মাধ্যমে নগরী পরিচ্ছন্নকরণ এবং সার্বিকভাবে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গৃহীত স্বচ্ছ ঢাকা কর্মসূচিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে গৌরবদীপ্ত গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছি।  এ ছাড়া জলজট দূরীকরণে পদক্ষেপ, নব প্রতিষ্ঠিত ১৮টি ওয়ার্ডকে নিয়ে পরিকল্পিত মডেল শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ, বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ, করপোরেশনের নিজস্ব ব্যয়ে বিনামূল্যে লাশ দাফন এবং শেষ কৃত্যানুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আধুনিক কর্মী নিবাস তৈরি, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ই-রেভিনিউ ও ট্রেড লাইসেন্স চালু, বিনামূল্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য রোগের ওষুধসহ পরামর্শ সেবা বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি অবৈধ বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করে দৃষ্টিনন্দন ডিজিটাল বিলবোর্ড ও এলইডি বক্স স্থাপন, আধুনিক পুলিশ বক্স নির্মাণ, যানজট নিরসনে আধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, ট্রাফিক সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন, গার্ড রেইল, বাস স্টপেজ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং, অনস্ট্রিট পার্কিং, চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুকরণ, কমিউনিটি সেন্টার ও মার্কেট নির্মাণ, ফুটপাথ হকারমুক্ত করা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  ইতোমধ্যেই উন্নয়নের এসব পরিবর্তন নগরবাসীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে।  জলসবুজে প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন এবং চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হলে এ নগরী এক নতুন দৃষ্টিনন্দন রূপ লাভ করবে।  গত প্রায় চার বছরে ডিএসসিসি তার সীমানায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রায় ৪১ হাজার এলইডি সড়কবাতি স্থাপন করেছে।  এছাড়া নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডে ১৫ হাজার এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ চলছে। নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডকে নিয়ে একটি পরিকল্পিত মডেল শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

অপরদিকে ঢাকার যানজট সহনীয় করতে স্থাপন করা হয়েছে যাত্রী ছাউনি, গুলিস্তানে ফুটপাত হকারমুক্ত করা হয়েছে। ট্রাফিক সাইন, গার্ড রেইল, বাস স্টপ, জেব্রা ক্রসিং, অনস্ট্রিট পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। সর্বশেষ এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যেতে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ১০ টাকা ভাড়ার চক্রাকার বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে মতিঝিল এলাকায় আরও একটি চক্রাকার বাস সার্ভিস শিগগিরই চালু করা হবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা