• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ইন্দোনেশিয়ায় টাকার বাতাস লেগেছে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮  

ইন্দোনেশিয়ায় টাকার বাতাস লেগেছে। সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশটিতে গড়পড়তা মানুষ দ্রুত মধ্যবিত্ত হয়ে উঠছে। যাকে বলে আঙুল ফুলে কলাগাছ। উমদা ধনদৌলত পেয়ে অনেকেরই মাথা যাচ্ছে বিগড়ে। আজব সব কাণ্ডকারখানায় তা ধরা পড়ছে। নানা অনুষ্ঠানে দুহাতে টাকা ওড়াচ্ছে তারা।

নব্য ধনীদের এমন সব খ্যাপাটে আচরণ নিয়ে বিবিসি অনলাইনে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিবিসির জাকার্তা প্রতিনিধি রেবেকা হেনস্কে ইন্দোনেশিয়া ঘুরে লিখেছেন সেখানকার ধনী ব্যক্তিদের অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানার কথা।

ইন্দোনেশিয়ার মানুষ কুকুর তেমন পছন্দ করে না। আজকাল ধনাঢ্য পরিবারের জন্মদিনের উৎসবে সেই কুকুরকেই থিম হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে। আজব কাণ্ড এখানেই থেমে থাকছে না। এক কন্যাশিশু ছয় বছরে পা দেবে। তার জন্য মা-বাবার ইত্যাকার আয়োজন। মেনতংয়ের একখণ্ড ফাঁকা জমিকে টাকা ঢেলে রাতারাতি জাকার্তার সবচেয়ে দামি পার্কে পরিণত করা হলো। কংক্রিটের নিষ্প্রাণ দুনিয়ায় দেখা গেল তরতাজা আসল ঘাসের জমি। পুরোপুরি বেড়ে ওঠা গাছ। দেখতে সুন্দর—এমন কিছু কুকুর রাখা হলো ওই পার্কে। কুকুরের জন্য থাকল ‘অবস্ট্যাকল কোর্সের’ মতো মনোরম বিষয়। এসব কুকুরের জন্য নিয়োগ করা হলো পরিচর্যাকারী। তারা কুকুরগুলোর রোম আঁচড়ে দেয়, গা ডলে দেয়—সে এক মহা আয়োজন। থাকল বরফ দেওয়া কফি আর মদ্যপানের আমোদ। ইন্দোনেশিয়ায় মদের ওপর কর অতি চড়া। এ জন্য সেখানে মদ্যপান মানেই টাকার শ্রাদ্ধ।

পার্কের মাঝামাঝি জায়গায় রাখা হলো কুকুরের আকৃতির বেলুন। থাকল বুদ্‌বুদ ছোড়ার জায়গা। শিশুরা স্লাইম দিয়ে সেখানে নানা জিনিস বানাতে পারে—এমন জায়গাও রাখা হলো।

ইন্দোনেশিয়ায় ধনীদের আদেখলাপনার আরেকটি নমুনা দেওয়া যাক। ইন্দোনেশীয় এক পরিবার হলিউডের দারুণ ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ নতুন করে সম্পাদনার জন্য একটি সিনেমা কোম্পানি ভাড়া করল। তারা এই ছবি সম্পাদনা করে প্রধান কয়েকটি দৃশ্যে ঢুকিয়ে দিল তাদের মেয়েকে। একটি হোটেলের বলরুমে সিনেমার মতো বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হলো এই ছবি।

ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বড় শহর সুরাবায়াতে ধনীদের এ ধরনের খ্যাপাটে কাণ্ড বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনাও চলছে।

হ্যাশট্যাগ ক্রেজিরিচসসুরাবায়ানসে বড়লোকদের পাগলামি নিয়ে সমালোচনা চলছে। স্থানীয় এক শিক্ষক হ্যাশট্যাগ ক্রেজিরিচসসুরাবায়ানসে তাঁর শিক্ষার্থীদের এক পরিবারের কথা বলেন। ওই পরিবার স্কুলের ছুটিতে শিশুদের জাপান ও ইউরোপের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই শিক্ষক বড়লোকদের এসব আদেখলাপনা নিয়ে এখন বই লিখছেন। অচিরেই তিনি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করবেন।

সুরাবায়াতে এক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরস্কার দিতে কুপনের আয়োজন করা হয়। সেখানে জিতলে জাগুয়ার স্পোর্টস গাড়ি পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

আসলে গত ২০ বছরে ইন্দোনেশিয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য কমেছে। দেশটিতে এখন প্রতি পাঁচজনে একজন এখন মধ্যবিত্ত। দেশটি নারকেল তেল এবং কয়লা, সোনা ও তামার মতো প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। করের নিম্নহার, শ্রম আইনের কম প্রয়োগ দেশটির অর্থনৈতিক গতিকে সচল করেছে। এসব কারণেই বেড়েছে নতুন নতুন ধনীর সংখ্যা।

বদল এসেছে দরিদ্রদের জীবনেও। ধনীরা বেশি অপচয় করছে—এটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও সত্যি যে দরিদ্রদের প্রয়োজনের পাল্লাও ভারী হয়েছে।

ইন্দোনেশীয় নাগরিক সালিমানের একটি ঘটনা বললেই বোঝা যায় এই বদল। সালিমান তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, তিনি জানেন, তাঁর কাটানো জীবন আর সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন আলাদা। সালিমন রাস্তার পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। কঠোর পরিশ্রম করে জীবনধারণ করতেন তিনি। সন্তানেরা এত পরিশ্রম করত দেখে বাবাকে ডাকত সুপারম্যান। আবর্জনার মধ্যে কিছু পেলে কুড়িয়ে নিতেন সালিমন। বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করতেন।

এখনো সালিমন তা–ই করেন। যে বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকেন, সেখানে একটি সুইমিং পুল অব্যবহৃত রয়েছে। সালিমন সেখানে মাছের চাষ করেছেন। বাড়িওয়ালার পরিবারের একজনের ফেলে দেওয়া হিল জুতোর হিল ফেলে দিব্যি ব্যবহার করছেন সালিমন।

আবার এত পয়সা বাঁচিয়ে চললেও সালিমন সন্তানের জন্য আইপ্যাড কেনার পরিকল্পনা করেন। কারণ, তিনি মনে করেন, সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনে এটা প্রয়োজন। সালিমনের এই চাহিদাকে ধনীদের পাগলামি বলা যায় না। বরং বলা যেতে পারে, ধনী হতে থাকা ইন্দোনেশিয়ায় দরিদ্রদের জীবনযাপনেও পরিবর্তন আসছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা