• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

আপনার শক্তি ও দুর্বলতা কী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০১৯  

একটি কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার পদে দু’জন প্রার্থীকে ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হলো তাদের শক্তি ও দুর্বলতা কী কী? এ প্রশ্নের উত্তরে একজন বললেন ‘আমি কঠোর পরিশ্রমী। এটাই আমার শক্তি। আর আমার দুর্বলতা হলো নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজ করতে না পারলে আমি মানসিক চাপে ভুগি।’ এখানে এই উত্তরটি মানানসই নয়। কারণ বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের কঠোর পরিশ্রমী ভাবেন।

আরেক প্রার্থী বললেন-‘আমি আমার কোনো দুর্বলতা খুঁজে পাই না। হয়তো আমার আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। সম্ভবত আমার শক্তি হলো অন্যদের সাথে কাজ করার সক্ষমতা। সহজে আমি সবার সাথে মিশতে পারি। সহজে হতাশ হই না আমি।’ এই উত্তরটিও সঠিক নয়। কারণ উত্তরটি নেতিবাচক ও কিছু অস্পষ্ট শব্দ যেমন: হয়তো, সম্ভবত- এগুলোর উপর নির্ভরশীল।

তাহলে এ প্রশ্নের কোন উত্তর সবচেয়ে উপযুক্ত? তা জানতে হলে আপনার শক্তি আর দুর্বলতাগুলো জানতে হবে আগে। 

জেনে নিন নিজের শক্তিমত্তা: আপনার শক্তিমত্তা জানতে হলে আগে নিজের দক্ষতাগুলো পর্যবেক্ষণ করুন। ইন্টারভিউয়ের আগে এই চর্চাটা বেশ জরুরি। তাই তিনটি ক্যাটেগরিতে নিজের দক্ষতাগুলোর তালিকা করুন।

* জ্ঞান ভিত্তিক দক্ষতা: পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে (যেমন: কম্পিউটার দক্ষতা, বিদেশি ভাষা জানা, নতুন ডিগ্রি নেয়া, প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল জ্ঞান) অর্জিত দক্ষতা আপনার কি কি আছে, তা জানুন।

* অভিজ্ঞতালব্ধ দক্ষতা: আপনি এক অফিস থেকে আরেক অফিসে কাজ করার ফলে যে সব অভিজ্ঞতালব্ধ দক্ষতা (যেমন: যোগাযোগ দক্ষতা, বিশ্লেষণভিত্তিক সমস্যা সমাধান ও পরিকল্পনা দক্ষতা) অর্জন করেছেন সে সব বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন।

* ব্যক্তিগত গুণ: আপনার কিছু বিশেষ গুণ (যেমন: নির্ভরযোগ্য, মিশুক, কঠোর পরিশ্রমী, সময়ানুবর্তী) সম্পর্কে জানুন।

তালিকাটি তৈরি শেষে এবার নিয়োগদাতার চাহিদা অনুযায়ী আপনার তিন থেকে পাঁচটি দক্ষতা ও গুণ তুলে ধরুন। খেয়াল রাখবেন, ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করলে যেন আপনি বলতে পারেন, কেন এগুলো আপনার গুণ বা দক্ষতা।

জেনে নিন আপনার দুর্বলতা: আপনার দুর্বলতাগুলো কী? এ প্রশ্নটি সম্ভবত ইন্টারভিউতে সবচেয়ে আতঙ্কজনক। কারণ সবারই কিছু না কিছু দুর্বলতা আছে। কিন্তু কেউ তা স্বীকার করতে চান না। বিশেষ করে ইন্টারভিউতে তো আরো আগে না। তবে এ প্রশ্ন মোকাবেলা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজের গুণগুলো সম্পর্কে কম বলা এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা। নিজের একটি গুণের কথা বলুন। পাশাপাশি একটি দুর্বলতার কথা ভেবে রাখুন এবং কিভাবে তা দূর করবেন সে সমাধানও ভেবে রাখুন। ব্যক্তিগত গুণের কথা না ভেবে পেশাগত দক্ষতাগুলোর উপর  মনোযোগ দিন। যেমন: বলতে পারেন ‘বড় কিছু করার মানসিকতার জন্য নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি আমি। স্বীকার করতে হবে যে, অনেক সময় ছোট ছোট বিষয়গুলো খেয়াল করতে পারি না। তবে আমি সব সময় নিশ্চিত করি যেন আমার টিমের কেউ একজন যেন ওইসব ছোট বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখেন।’

কেমন উত্তর হওয়া উচিত: এবার একটি ইতিবাচক কথা লিখুন যা আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতেও পারবেন। যেমন: ‘পরিবর্তনকে মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা আমার শক্তি। আগের অফিসে একজন কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার হিসেবে আমি নেতিবাচক কাজের পরিবেশ বদলে ফেলে খুব কর্মচঞ্চল একটি টিম গড়ে তুলেছিলাম। আর আমার দুর্বলতার কথা বলতে গেলে স্বীকার করতে হয়, আমার ব্যবস্থাপনা দক্ষতা আরো ভালো হতে পারতো। এ ব্যাপারে উন্নতিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি আমি।’

মনে রাখবেন, আপনার শক্তি আর দুর্বলতা নিয়ে যখন প্রশ্ন করবেন নিয়োগদাতা, তখন তারা সঠিক উত্তরটিই জানতে চাইবেন। আর আপনার উত্তরের উপর ভিত্তি করেই নিয়োগদাতা আপনার সম্পর্কে ধারণা পাবেন। একটি উত্তরে হয়তো আপনার চাকরি আটকে যাবে না, তবে যদি উত্তরটি ভুল বা অতিরঞ্জিত হয়, তাহলে হয়তো পরে চাকরিটি পেয়েও হারাতে পারেন আপনি। আপনার প্রকৃত ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। নিয়োগদাতাকে জানান কোনো দুর্বলতা থাকলেও তা উৎরে উঠার চেষ্টা অব্যাহত আছে আপনার। এতে ভালো দিকগুলো বিবেচনা করে আপনার সততার মূল্য দিয়ে নিয়োগদাতা হয়তো আপনাকেই ওই পদের জন্য সঠিক লোক হিসেবে বেছে নেবেন।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা