• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

জিআরএস-এ সরকারি সেবার সুফল মিলবে খুব সহজে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

তথ্য অধিকার আইনের সুফল পেতে হলে জনগণের প্রাপ্য সেবার তথ্য জানতে হবে সবার আগে। সঠিক তথ্যের জন্যে সরকারি দফতরের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, জনগণ ও গণমাধ্যমকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তথ্যের অবাধ, সঠিক ও সময়োচিত প্রকাশ একদিকে যেমন জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে অন্যদিকে সুশাসন নিশ্চিত হবে, যা জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। তথ্য অধিকার আইন জনগণের কল্যাণে প্রণীত। যারা সেবা নেবেন এবং যারা সেবা প্রদান করবেন দু’পক্ষকেই সচেতন হতে হবে। আর এ জন্য, আরটিআই, ইনোভেশন, সিটিজেন চার্টার, জিআরএস, এনআইএস এবং ওয়েবপোর্টাল এই ছয়টি টুলস সকল সরকারি দফতরে কার্যকর করতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।

সরকারের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (জিআরএস) সেবা নিয়ে কথা বললে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান। 

জিআরএস হলো- অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা (জিআরএস)। সরকারি সেবা প্রদান বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে নাগরিকের অসন্তুষ্টি ও সংক্ষুব্ধতা প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হলো জিআরএস। এর দ্বারা মূলত দ্রুত ও সহজে সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি সেবাদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।  

জনগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরসমূহের প্রতিশ্রুতি সেবা, সেবা প্রদান পদ্ধতি এবং পণ্যের মান সম্পর্কে নাগরিক অসন্তুষ্টি বা সংক্ষুব্ধতা থেকে অভিযোগের উৎপত্তি হতে পারে। তার প্রেক্ষিতে প্রতিকারে চাওয়া বা বক্তব্য প্রদানের কার্যকর ক্ষেত্র বা প্লাটফর্ম হলো জিআরএস।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের সেবা প্রদানে অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা জিআরএস প্রবর্তন করা হয়। অভিযোগ মানেই দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়টি তা না। অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে সেবার মান উন্নয়নের একটি কৌশলগত দিক।

www.grs.gov.bd ওয়েবসাইটের গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে এর স্ব স্ব মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ দফতর সংস্থা/ আঞ্চলিক অফিস/ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসসমূহের অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করা যাবে। অন্যান্য পদ্ধতিতে (যেমন: ই-ফাইলের মাধ্যমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অথবা কল সেন্টারের মাধ্যমে) অভিযোগ দাখিল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ দাখিলে নির্ধারিত ফর্ম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়/ বিভাগ এবং সকল দফতরের ফ্রন্ট ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থা রয়েছে। 

যে কোনো ধরনের প্রমাণপত্র যেমন- ঘুষের ক্ষেত্রে রশিদ বা খারাপ আচরণ এর জন্য অডিও, ভিডিও রেকর্ডসহ অভিযোগ করা যাবে। তবে কোনো প্রমাণ না থাকলেও অভিযোগকারী অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে এই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা হবে। 
 
অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থায় যিনি অভিযোগ করবেন অবশ্যই তার সব তথ্য গোপন থাকবে। এ নিয়ে অভিযোগকারীকে ভীত হওয়ার কিছু নেই।

অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থায় যিনি অভিযোগ করবেন তার অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তবে বারবার মিথ্যা অভিযোগ করলে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। 

অভিযোগকারী অনলাইনে অভিযোগ করলে জিআরএস সফটওয়ারের মাধ্যমেই জানতে পারবেন। আর যদি অফিসে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে অভিযোগ করেন তাহলে যে দফতরে অভিযোগ করেছে সেই দফতর থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। 

জিআরএস সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কতোটুকু জানে জানতে মাঠ পর্যায়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে, নিয়াজ মাহমুদ নামে একজন বলেন, জিআরএস সম্পর্কে তিনি কিছু জানতেন না। আজই জানতে পারেন তিনি। তবে তানজিনা তানিয়া নামে এক তরুণী জিআরএস কার্যক্রম সম্পর্কে অনেকটাই ব্যাখ্যা করেছেন। এমন আট জনের সঙ্গে কথা বললে মোটামুটি ২ জন এ সম্পর্কে জানার কথা জানান আর একজন পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে না পারলেও  সরকারি সেবা জিআরএস আছে সেই বিষয়টি তিনি বলতে পেরেছেন বা জানেন। তবে সবাই এই সেবার প্রশংসা করে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।  

জিআরএস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ওসমান গনির সাথে কথা বলে জানা যায়, জিআরএস সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে প্লাটফর্মস ফর ডায়লগ (p4d) প্রকল্প চালু আছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২১টি জেলায় স্থানীয়, জেলা, উপজেলা ও  ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তাদের পোস্টার লিফলেট, প্যানাফ্লেক্স, ওয়ালমেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জিআরএস-এর মাধ্যমে সরকারি দফতরগুলোতে সেবার মান আগের চেয়ে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।  

সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রচারণা ও বিস্তৃতি জনসাধারণের দৌড়গড়ায় পৌঁছাতে গণমাধ্যমের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাই আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি প্রফেসর আফরোজা সোমার কাছে। তিনি জানান, ৯৯৯ এর মতন সরকারের আরো বেশ কিছু সেবা রয়েছে। ৯৯৯ সম্পর্কে মানুষ যতোটা জানে জিআরএসসহ সরকারি সেবার ছয়টি টুলস সম্পর্কে মানুষ ততোটা জানে না। না-জানার কারণে সেইসব সেবার সুবিধাগুলো সাধারণ মানুষ নিতে পারছে না। কিন্তু ৯৯৯ এর সেবা সবাই ব্যবহার করছে কারণ প্রচারণাটা হয়ে ব্যাপকভাবে। কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। তাই জিআরএস-সহ ৬টি টুলসের প্রচার বিস্তৃত করতে হবে। সেবাগুলো নিয়ে জনসাধারণকে আরো বেশি করে জানানো দরকার। তাহলে মানুষ এই সেবাগুলো ব্যবহার করে সুফল পাবে।

তিনি আরও জানান, এই নিয়ে সরকারি দফতরের পাশাপাশি গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো উচিত। নিউজ রিপোর্ট, টক শো, ফিলার, পিএসএস, টিভিসি, অভিসি, বিলবোর্ড ও প্রমো প্রচারিতসহ এমন নানা পদ্ধতি অবলম্বন হলে সাধারণ দর্শকরা এই নিয়ে জানতে পারবেন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদেরকেও বিশেষ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের এই নিয়ে জানানো দরকার। সরাকারের পক্ষে একা তো কিছু করার সম্ভব না, আমাদের প্রত্যেককেই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।  তাহলে, এই সেবাগুলো ব্যবহার করে মানুষ সুবিধা পেতে পারবেন। এমন সেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এর সুফল কামনা করেন তিনি। 

দুর্নীতি বা অনিয়মে করলে পার পাওয়া যায়, এই ভাবনার শেষ ঘটাতে নীতি-নির্ধারণী এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়ন জরুরি। এ জন্য সেবাপ্রদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেবাপ্রদানকারীর আচরণগত বিষয়গুলো জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৌশল প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানির মতো জনগণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিরসন প্রক্রিয়া (জিআরএস) সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। যেসব খাতে জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের কারণে সেবাদান ব্যাহত হয় সেসব খাতে বিদ্যমান ঘাটতি দূর করতে হবে। তাহলে জিআরএসসহ সব সেবার সুফল মিলবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা