• শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

আশুরা ও কারবালার তফাৎ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২৩  

আরবি হিজরি সনের প্রথম মাস হলো মহররম। ইসলামের দৃষ্টিতে মহররম একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত আছে এ মাসকে ঘিরে।

মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ সেই আশুরার দিন। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ ও দীর্ঘ দিন ক্ষমা প্রার্থনা শেষে এদিনই তার তওবা কবুল করা হয়।

ফেরআউনের কবল থেকে হজরত মুসা (আ.) এর মুক্তি, হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর বিজয় ও দাম্ভিক নমরুদের পরাজয় ঘটে। হজরত নুহ (আ.) এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তিও আশুরাতেই সংঘটিত হয়েছিল।

নবীদের ঘটনার বাইরেও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালায় হুসাইন ইবনে আলী (রা.) এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইসলাম এবং ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই। এই দিন এবং এর আগে পরে একদিন মিলিয়ে রোজা রাখতেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং অন্যদের রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন তিনি। (সহিহ মুসলিম: ২৫২০)

রমজান মাসের রোজার পর অন্যান্য নফল রোজার মধ্যে সব থেকে ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ রোজা হলো আশুরার রোজা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার অনেক আগে থেকে মক্কায় অবস্থানকালীন সময়েও মহররমের ১০ তারিখ তথা আশুরা দিন রোজা রাখতেন।

অথচ বর্তমানে দেখা যায় প্রায় সব মহল থেকে আশুরার মূল বিষয় বলে কারবালার ঘটনাকেই বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক নয়।

কারণ, ইসলাম আগমনের পূর্বেও আশুরা ছিল। আশুরা শব্দটি আশারা থেকে এসেছে। এর অর্থ দশম। মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আমরা হাদিস জানতে পেরেছি, তখন মক্কার মুশরিকরা আশুরার রোজা পালন করত তেমনি ইহুদিরা হজরত মুসা (আ.) এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সওম পালন করত।

মহান আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার রোজা পালন করেছেন জীবনের প্রতিটি বছর। তার ইন্তেকালের পর তার সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আশুরার রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির মহররমের ১০ তারিখে কারবালার ময়দানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

মহান আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) ও তার সাহাবায়ে কেরাম যে আশুরা পালন করেছেন ও যে আশুরা উম্মতে মুহম্মাদির জন্য রেখে গেছেন তাতে কারবালার ঘটনার কোনো ভূমিকা ছিল না।

কারবালার এ দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সাহাবাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ বিন ওমার (রা.), আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.), আনাস বিন মালেক (রা.), আবু সাঈদ খুদরী (রা.), জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.), সাহল বিন সায়াদ (রা.), যায়েদ বিন আরকাম (রা.), সালামাতা ইবনুল আওকা (রা.)-সহ বহু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। তারা তাদের পরবর্তী লোকদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার পরিবারবর্গকে অনেক বেশি ভালবাসতেন।

তারা আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার কারণে কোনো কিছুর প্রচলন করেননি। মাতম, তাজিয়া মিছিল, আলোচনাসভা কোনোকিছুরই প্রমাণ পাওয়া যায় না।

আশুরায় যেসব কাজ করা উচিত নয়

* হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে কাল্পনিক তাজিয়া বা নকল কবর বানানো থেকে বিরত থাকা।

* তাজিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা থেকেও বিরত থাকা।

* ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাজিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকা।

* হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া ও শোকগাঁথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে পেটে পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকেও বিরত থাকা।

* হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ঐ বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মহররম বিষয়ক একটি কু-প্রথাও বটে।

* নকল এসব তাজিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা এবং এসব তাজিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকেও বিরত থাকা।

* নিজেদের দেহে আঘাত বা রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।

* শোক বা মাতম করা থেকে বিরত থাকা।

* যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা থেকে বিরত থাকা।

* আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

আজকের খুলনা