• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

যে কারণে ‘আদ’ জাতির ওপর গজব নেমেছিল

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

আদ' জাতিকে আরব দেশের প্রথম বাসিন্দা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। তারা প্রাচীন আরব বা ধ্বংসপ্রাপ্ত আরববাসী নামে পরিচিত।

'আদ' প্রকৃতপক্ষে নূহ (আ.)-এর পঞ্চম পুরুষের মধ্যে সামের বংশধরেরই এক ব্যক্তির নাম। তার বংশধর ও গোটা সম্প্রদায় 'আদ' নামেই খ্যাত হয়ে যায়। আদ এর দাদার নাম ইরাম। 'আদ' ও 'সামুদ' উভয়েই ইরামের দুই শাখা। 'আদ' সম্প্রদায়ের ১৩টি শাখা ছিল।

আম্মান থেকে শুরু করে হাজরামাউত ও ইয়ামান পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল। তারা কৃষি কাজ করত। তাদের খেত-খামারগুলো অত্যন্ত সজীব ও শস্য-শ্যামল ছিল। তাদের সব রকমের বাগান ছিল। এমনকি তারা ছিল সুঠামদেহী ও বিরাট আকৃতির। আল্লাহ তাআলা তাদের সামনে দুনিয়ার যাবতীয় নেয়ামতের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন। ’আদ’ জাতির ওপর  হুদ (আ.) কে নবী হিসেবে আল্লাহ তাআলা পাঠিয়েছিলেন।

নূহের প্লাবনের পরে এরাই সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা শুরু করে। যাদের ওপর আল্লাহ তাআলার গজব নাযিল হয়েছিল। তারা অত্যন্ত অহংকারী জাতি ছিল। এই ’আদ’ জাতি দৈহিক গঠন ও শক্তি-সাহসে অন্য সব জাতি থেকে স্বতস্ত্র ছিল। এমন শক্তিশালী জাতি ইতিপূর্বে পৃথিবীতে সৃজিত হয়নি।

তা সত্ত্বেও কোরআনে তাদের দেহের মাপ অনাবশ্যক বিবেচনা করে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইসরাইলি রেওয়ায়েত সমূহে তাদের দৈহিক গঠন ও শক্তি সস্পর্কে অদ্ভূত এক ধরনের কথাবার্তা বর্ণিত আছে। হযরত ইবনে আব্বাস ও মুকাতিল থেকে তাদের উচ্চতা ১২ হাত তথা ১৮ ফুট বর্ণিত আছে। মূলত তারা ইসরাইলি রেওয়ায়েত দৃষ্টেই একথা বলেছেন।

আদ, সামূদ এবং ফেরাউন গোত্রের অপকীর্তির ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর আযাব নাযিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি লোকের প্রতিটি ক্রিয়া-কর্ম ও গতিবিধির ওপর দৃষ্টি রাখছেন এবং সবাইকে তার প্রতিদান ও শাস্তি দেবেন।

হূদ (আ.) তার জাতিকে শিরকমুক্ত ইবাদতের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'হে আমার জাতি, তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই। তোমরা কি তাকে ভয় করো না?'

’আদ’ জাতির আগে নূহ (আ.)-এর জাতির ওপর পতিত মহাশাস্তির স্মৃতি মানুষ তখনও ভুলে যায়নি। তাই হূদ (আ.) আজাবের কঠোরতা বর্ণনা করার প্রয়োজন মনে করেননি। বরং এতটুকু বলাই যথেষ্ট মনে করেছিলেন যে 'তোমরা কি ভয় করো না?'

হজরত হূদ (আ.)-এর দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে ’আদ’ জাতির সরদাররা বলতে লাগল, 'আমরা তোমাকে নিশ্চিত নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ধারণা, তুমি একজন মিথ্যাবাদী।'

হজরত নূহ (আ.)-এর জাতিও তাকে প্রায় একই কথা বলেছিল। উভয় কথার উত্তরও একই দিয়েছিলেন । অর্থাৎ আমার মধ্যে কোনো নির্বুদ্ধিতা নেই। ব্যাপারটা কেবল এতটুকু যে আমি বিশ্ব প্রতিপালকের কাছ থেকে রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। আমি তার বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দেই। যদিও তা তোমাদের মনঃপূত নয়।

’আদ’-এর অমার্জনীয় পাপের ফলে প্রাথমিক গজব হিসেবে তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেত সমূহ শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়। বাগ-বাগিচা জ্বলে-পুড়ে যায়। এতেও তারা শিরক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেনি।

কিন্তু অবশেষে তারা বাধ্য হয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। তখন আসমানে সাদা, কালো ও লাল মেঘ দেখা দেয় এবং গায়েবী আওয়াজ আসে যে, ’তোমরা কোনটি পছন্দ করো?’ লোকেরা বলল কালো মেঘ।

তখন কালো মেঘ এলো। লোকেরা তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, এটি আমাদের বৃষ্টি দেবে।’ জবাবে বলা হয়, বরং এটা সেই বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এটা বায়ু। এতে রয়েছে শাস্তি। তার পালনকর্তার আদেশে সে সব কিছুকে ধ্বংস করে দেবে। ফলে অবশেষে পরদিন ভোরে আল্লাহর চূড়ান্ত গজব নেমে আসে।

সাত রাত্রি ও আট দিনব্যাপী অনবরত ঝড়-তুফান বইতে থাকে। মেঘের বিকট গর্জন ও বজ্রাঘাতে বাড়ি-ঘর সব ধ্বংস হয়ে যায়। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গাছ-পালা সব উপড়ে যায়। মানুষ ও জীবজন্তু শূন্যে উথিত হয়ে সজোরে যমীনে পতিত হয়।
 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা