• সোমবার ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৫ ১৪৩১

  • || ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

বিভিন্ন দেশের সমর্থন

বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে সরকারের

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩০ আগস্ট ২০২৪  

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভ্যুত্থানে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দল এবং গণমানুষের সমর্থন পাওয়া এই সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের মানুষের ইতিবাচক প্রত্যাশার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের শক্তিশালী বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে সবরকম সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণের পর থেকেই সরকারকে সমর্থন দিতে শুরু করেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় জানায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের সমর্থন নিয়ে সংশয় থাকলেও শপথ গ্রহণের পরপরই সর্বপ্রথম সরকারকে অভিনন্দন জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

দেন একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বনেতৃত্ব এই সরকারকে স্বাগত জানান এবং যে কোনো উপায়ে সহযোগিতা দিতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেন। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত, যে মৃত্যু ও সহিংসতা ঘটেছে, তার জবাবদিহি নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। দেশের গণতান্ত্রিক পথ এবং বাংলাদেশের জনগণ ও যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এই সরকার কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিশ্বনেতারা।

সবার আগে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য উভয় দেশের জনগণের যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে নিজেদের চাওয়ার কথা সরকারকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য ড. ইউনূসের আহ্বানকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে। দেশ পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে ফ্রান্স। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণ প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো উপায়ে সহযোগিতা দিতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের জটিল এ কাজে তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বনেতারা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় জানিয়েছে। ছাত্রজনতার বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা সরকারের করা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের তদন্তে এরই মধ্যে জাতিসংঘের একটি প্রাথমিক কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করছে। এসবই প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক মহলকে খুব ভালোভাবেই বাংলাদেশ পাশে পাচ্ছে।

আবার জনগণের দিক থেকেও এই সরকারের প্রতি ইতিবাচকতা লক্ষ্য করা গেছে। জনগণ মনে করছে, এই সরকারকে সফল করা দরকার। কারণ আগের সরকারগুলোর প্রতি জনগণের ভেতর যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, তারা হয়তো ভাবছে এই সরকারকে সমর্থন দিলে তারা ঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের কাজগুলো করবে। এই সরকার বাংলাদেশকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে পারবে। সরকার জনগণের দিক থেকে সেই সুবিধাটা পাচ্ছে। এই সুবিধা পুরোপুরি পেতে হলে সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে যেতে হবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশর বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা ও একসঙ্গে কাজ করার একটা শুভ ইচ্ছা বাইরের পৃথিবীর আছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। আমাদের নিজেদের সক্ষমতাকে স্থিতিশীল করে তাদের শুভ ইচ্ছাকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণের কারণে। এই যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ যে সক্ষমতা দরকার, আপাতদৃষ্টিতে সেখানে খানিকটা ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ছাড়া এই ঘটনার আগে থেকেই আমরা একটা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা একটা চাপের মধ্যে আছি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটটা স্থিতিশীল হওয়া পর্যন্ত এই চ্যালেঞ্জটা থাকবে। অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার জন্য যে কাঠামো পরিবর্তনগুলো এখন হচ্ছে, সেটার ফলাফল পেতে কিছু সময় লাগবে। এই সময়টা যে কোনো সরকারের জন্যই চ্যালেঞ্জের।’

সংস্কারের জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে জানিয়ে ড. হুমায়ূন বলেন, ‘পুলিশে পরিবর্তন হচ্ছে, সিভিল সার্ভিসে পরিবর্তন হচ্ছে, ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কার করা হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে যাদের বসানো হচ্ছে, সেগুলো স্থিতিশীল হতে কিছু সময় লাগবে। যে সময়টা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত পরিবর্তনের একটা জটিলতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের চাপ রয়েছে। বাইরের দেশের কাছে আমাদের অবস্থানের বাস্তব ছবি তুলে ধরার জন্য যে কাজটা দরকার, এই মুহূর্তে সরকার সেই কাজটা করার জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি।’

বহির্বিশ্বের সমর্থন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি এ বিষয়গুলো বোঝা খুব মুশকিল। সরকারকে সময় দিতে হবে। অন্তত ৬ মাস যাওয়ার পর আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে বিনিয়োগ আছে কি না, বিভিন্ন ধরনের সাহায্য কি আসছে? দেশের অবস্থা একটু স্থিতিশীল হলে আমরাও এ ব্যাপারে তাদের বলতে পারব যে, তারা আমাদের কী ধরনের সাহায্য করতে চাচ্ছে। তারা কি নতুন ইনভেস্টমেন্ট করবে, পুরোনো ইনভেস্টমেন্টগুলো থাকবে কি না, এসব বিষয়ে জানা যাবে। তারা যে লোন দেবে সেগুলোর ইন্টারেস্ট রেট কতটুকু কমাবে। নতুন সরকারকেও এ ব্যাপারে প্রায়োরিটি তৈরি করতে হবে।’

আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাকে নতুন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ‘নতুন সরকারকে শিগগির কিছু অগ্রগতি দেখাতে হবে। মুদ্রাস্ফীতি কত তাড়াতাড়ি কমানো যায় এবং অর্থনীতির কাঠামো কত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে—সেটা আমার কাছে মনে হয় একটা বড় বিষয়। এর সঙ্গে দ্বিতীয় যেটা বিষয়, সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ কত তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট করতে পারবে। আর সবকিছুর জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। সেই সময়টা সরকারকে দিতে হবে এবং সবার সহযোগিতাও এখানে প্রয়োজন। তাহলে নতুন সরকারকে বিশ্বনেতারা যেভাবে গ্রহণ করার কথা বলেছে সেটির ইতিবাচক ফলাফল পাবে সরকার, সঙ্গে জনগণও এই সুযোগ ভোগ করতে পারবে।’

আজকের খুলনা