সুফিয়া কামালকে কেন আমাদের স্মরণে রাখতেই হবে
আজকের খুলনা
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২১
তখন স্কুলে পড়ি। থাকতাম নারিন্দার মনির হোসেন লেনে। গোটা নারিন্দায় বছর ঘিরে শিশু-কিশোরদের নানা ধরনের অনুষ্ঠান হতো। উদ্যোক্তা ছিল পাড়ার স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় থাকতেন বড়রা। সে সময় পাড়ার সবাই সবাইকে চিনত-জানত। পাশেই শরৎগুপ্ত রোডে সওগাত-এর সম্পাদক নাসিরউদ্দীন চাচা থাকতেন। তাঁর বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় মঞ্চ বানিয়ে অনুষ্ঠান হতো। এমনই এক অনুষ্ঠানে কবি সুফিয়া কামাল এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে। পরনে ছিল লাল কস্তা পাড়ের সাদা শাড়ি। অনুষ্ঠান শেষ হলে কবির পূর্বপরিচিত আমার বাবা আমাকে আর আমার ছোট ভাই বুলবুলকে (শিল্পী আনিসুর রহমান) বললেন কবিকে সালাম করতে। আমি উঠে দাঁড়াতেই তিনি কাছে টেনে নিয়ে আদর করলেন। নাম জানতে চাইলেন। কবির প্রথম আদরের কথা কখনো ভোলার নয়, আজও মনে পড়ে।
ওই ঘটনার দিন দুই পর কামরুননেছা স্কুলে আমাদের বড় আপা আনোয়ারা বাহার চৌধুরীর ঘরের সামনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন সুফিয়া কামাল। আমরা কবিকে দেখার জন্য সামনের পথ দিয়ে বারবার যাওয়া-আসা করছিলাম। সেটা দেখে বড় আপা আমাদের ডাকলেন। আমরা দৌড়ে বারান্দায় উঠে গেলাম। বড় আপা কিছু বলার আগেই আমি কবির পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। সেদিনও কাছে টেনে আদর করলেন। তারপর থেকে কবিকে দেখলেই কাছে ছুটে যেতাম। আবার সুযোগও জুটে যেতে লাগল দাদাভাইয়ের ‘কচি-কাঁচার মেলা’র কল্যাণে। গার্ল গাইডসের মাজেদা আপার সঙ্গে নূরজাহান আপার বেগম পত্রিকা অফিসে যাওয়ার সুযোগে। বাবার সঙ্গে কার্জন হলের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুবাদে। এমনতর নানান সুযোগে কবির সান্নিধ্য আর স্নেহসিক্ত হওয়ার সৌভাগ্য হতে লাগল। ধীরে ধীরে তিনি আমাদের উৎসাহ ও প্রেরণাদাত্রীর স্থান দখল করে নিলেন। একসময় হয়ে গেলেন সবার প্রিয় ‘খালাম্মা’।
তিনি কেবল কবি ছিলেন না, ছিলেন বড় একজন মানুষ। দেশ ও দশের মঙ্গলে ঝাঁপিয়ে পড়তে কুণ্ঠা বোধ করতেন না। মানুষের জন্য দাবি আদায় আর অন্যায়ের প্রতিবাদে থাকতেন মিছিলের নেতৃত্বে। অন্যের কষ্টকে নিজের বলে ভাবতেন। দুঃখ-কষ্টে মানুষের পাশে ছুটে যেতেন। মনে পড়ে ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাস বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ, ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আর যারা বেঁচে রইল, তাদের আহার নেই, বাসস্থান নেই। জাতির ওই দুঃসময়ে এই মানুষটি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা ও উদাসীনতাকে ধিক্কার দিয়ে বেসরকারিভাবে সবাইকে ত্রাণসহায়তার আহ্বান জানান। আমি তখন গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনে কর্মরত। কবির আহ্বানে গাইড সদস্যদের ত্রাণসামগ্রী দানের জন্য অনুরোধ জানালে বিপুল সাড়া পাই। ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে বড় বড় চটের ছালা ভর্তি করে চাল-ডাল, নুন, বোতলভরা তেল, চিড়া-মুড়ি, ছোলা সংগ্রহ করে বেইলি রোডের গাইড হাউসে আমরা পৌঁছাতে লাগলাম। পরে শিশুদের জন্য গুঁড়া দুধের টিন, চিনি, জামাকাপড়সহ সংগৃহীত সব ত্রাণসামগ্রী, দেশলাই, মোমবাতি আলাদা প্যাকেট করে সুফিয়া কামালের কাছে পৌঁছাতে থাকলাম। কবি বড় একটা জাহাজে করে ২৫ জন কর্মী বাহিনীকে নিয়ে ত্রাণসামগ্রীসহ দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রা করেন। আমরা দুঃসময়ে বাঙালিরা এক হয়ে ত্রাণকাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম।
১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার, চিকিৎসা, আশ্রয়, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনে তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ২২ দিনের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে তদানীন্তন সাংসদ বেগম বদরুননেছা আহমেদের সহযোগিতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থা’ যাত্রা শুরু করে। ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি তদানীন্তন ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী কামারুজ্জামানের দপ্তরে তাঁর সভাপতিত্বে প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গঠিত সংস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনে সমাজকল্যাণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত হয়। সমাজকল্যাণের তখনকার পরিচালক বজলুল মজিদ তাঁর দপ্তরের সব কর্মী বাহিনীকে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের কাজে সহায়তার নির্দেশ দেন, সবাই যেন সুফিয়া কামালকে তাঁর গঠিত সংস্থার কাজে পেশাদার সমাজকল্যাণকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
অধিদপ্তর থেকে বেগম সাহেরা আহমদকে সদস্যসচিবের দায়িত্ব দিয়ে কবি সুফিয়া কামালের সংস্থায় সার্বক্ষণিক কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম দিন থেকেই সুফিয়া কামালের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগে আমার প্রতিটি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ও কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। সংস্থার সভাপতি ছিলেন সুফিয়া কামাল। সহসভাপতি ছিলেন বেগম বদরুননেছা আহমেদ। এই দুই মহীয়সী নারীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছি। খুব কাছে বসে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনেছি। বেগম মুজিবের হাতে বানানো চা-নাশতা খেয়েছি আমরা সবাই মিলে। এসব কিছুই হয়েছে সুফিয়া কামাল খালাম্মার জন্য।
দেশ স্বাধীন হলে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে নির্যাতিত নারীদের উদ্ধার ও চিকিৎসার কাজ চলছে। তখন তিনি আমাকে পাঠালেন মাদার তেরেসার কাছে। সেবারই প্রথম ইসলামপুরে তাঁর মিশনারিজ অব চ্যারিটি সেন্টারে যাই, সেখানে মহীয়সী নারী মাদার তেরেসার সান্নিধ্য লাভ করার সুযোগ হয়। কী বিনম্রভাবে আর প্রচণ্ড শক্তিশালী পরামর্শ দিলেন তিনি। যুদ্ধশিশুদের সমস্যা পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বলেন আর নির্যাতিত মা-বোনদের গর্ভপাত করিয়ে তাঁদের বাঁচাতে হবে। এর জন্য আইন দরকার। ফিরে এসে এসব কথা খালাম্মাকে জানালে তিনি ছুটলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। তাঁকে কবি গর্ভপাত আইন ও আন্তর্জাতিক শিশু দত্তক আইন প্রণয়নের গুরুত্বটা জানালেন। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন দুটি প্রবর্তিত হয়।
আমি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সুফিয়া কামাল ও বেগম বদরুননেছা আহমেদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ১৯৭২ সাল সারাটি বছর বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনকে নতুন করে স্বাধীন বাংলাদেশে কাজ করার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে। গার্ল গাইডসের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়।
তারপর কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থায় পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে সুফিয়া কামাল ও বদরুননেছা আহমেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আজ ২০ নভেম্বর কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুদিবস। তাঁর সারা জীবনের কর্মকাণ্ড আমাদের পথচলার পাথেয়। খালাম্মার সবচেয়ে স্মরণীয় কাজ হলো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত, ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মা-বোনদের পাশে থাকা। কয়জন পারে এ বিশাল দায়িত্ব পালন করতে। আমরা কবির আত্মার শান্তি কামনা করি।
● মালেকা খান কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংস্থার সাবেক পরিচালক
- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক
- মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে গবেষণার আহ্বান
- গ্যাস খাতে বড় সংস্কার করবে পেট্রোবাংলা
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে চায় কিরগিজস্তান
- চলবে ১২০ দিন
নোয়াখালীর নতুন গ্যাস কূপে খনন কাজ শুরু - যমুনায় বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৪.৮ কিমি এখন দৃশ্যমান
- বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএর সন্ত্রাসী নিহত
- ঢাকায় কাতারের আমির
অগ্রাধিকার পাচ্ছে বাণিজ্য বিনিয়োগ ও ভূরাজনীতি - বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন
- প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফরে সই হবে ৫ চুক্তি ও সমঝোতা
- খুলনায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
- বগুড়ায় সিনেমা হলে টিকিটের সঙ্গে বিরিয়ানি ফ্রি
- থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, সই হবে ৫ চুক্তি-সমঝোতা
- যে বার্তা নিয়ে ঢাকা আসছেন চীনের বড় দুই প্রতিনিধিদল
- গরমে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় স্ট্যান্ডবাই কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল
- যুদ্ধ নয়, ব্যয় করুন জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায়: প্রধানমন্ত্রী
- জনসভার বিষয়ে বিএনপিকে ২৮ অক্টোবরের কথা মনে করিয়ে দিলেন
- এপ্রিলের ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৮ কোটি ডলার
- চালের বিকল্প হিসেবে গম আমদানি করছে সরকার
- বসছে ভেন্ডিং মেশিন
স্টেশনে যাত্রীরাই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকিট - দুবাই বন্দরে পৌঁছাল এমভি আব্দুল্লাহ, নাবিকদের উচ্ছ্বাস
- বোরোর বাম্পার ফলনে হাওড়ে উৎসবের আমেজ
- শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ
- কাতারের আমির ঢাকা আসছেন আজ, সই হচ্ছে ছয় চুক্তি পাঁচ স্মারক
- উন্মুক্ত হতে পারে কুয়েতের শ্রমবাজার
- প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ
- হজযাত্রীদের টিকা নিতে লাগবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
- দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী
- প্রচণ্ড গরমে লাইভ সংবাদে জ্ঞান হারালেন পাঠক
- আমি আসলাম আর আপনি চলে যাচ্ছেন: নাসিরকে পরীমনি
- আজ থেকে শুরু ফিরতি ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি
- পায়ুপথে পেটের ভেতর ২৫ ইঞ্চি কুঁচিয়া মাছ, জ্যান্ত উদ্ধার
- ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই একে একে মৃত্যুর কোলে ৪
- ৫০ বছর পর মা-মেয়ের মিলন
- চলন্ত মেট্রোতে দুই তরুণীর রং মাখামাখি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি
- দেশের জনগন সন্ত্রাস দমন ওআইনশৃঙ্খলার উন্নাতি হওয়ায় সুফল ভোগ করছেন
- কেসিসির ৩৭ কর্মচারী চাকরিচ্যুত
- শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ
- ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কতটুকু পানি পান করবেন
- ডুমুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- ইতিকাফের জন্য যেসব শর্ত মানতে হবে
- ভালো শিক্ষার্থী হলেই হবে না, আদর্শবান মানুষ হতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
- ‘অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার সুস্থ আছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে’
- অনলাইনে ঝুঁকছেন ক্রেতারা
- খুলনায় বাসে তল্লাশি, ১২ স্বর্ণের বারসহ যুবক আটক
- হার্টের ২৩ ধরনের রিংয়ের দাম কমলো
- রাসুল (সা.) রোজা অবস্থায় যেসব কাজ পরিহার করতে বলেছেন
- বিশ্বের সব দেশেই পরকীয়ার অস্তিত্ব আছে...
- তাপদাহ নিয়ে যা জানালেন হিট অফিসার