• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

আয়কর দেওয়ার আগে প্রস্তুতির ১০ নিয়ম, ভুল হলেই সর্বনাশ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২১  

ট্যাক্স রিটার্ন হলো করদাতার দর্পণ। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আপনার চেহারা যেমন দেখা যাবে, রিটার্নে আপনার সম্পদের আয় এবং ব্যয়ের সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠবে। ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন দেওয়ার শেষ সময়। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া থেকে বাঁচতে এখনই প্রস্তুতি নিন। রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে জেনে নিন দশ নিয়ম:

১. ট্যাক্স আইডেন্টিটিফিকেশন নাম্বার (TIN) 

টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার একটি বিশেষ নম্বর, যা দিয়ে করদাতাকে শনাক্ত করা হয়। টিআইএন একটি জরুরি কর সনদপত্র। কর প্রদান করা ছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। সংশ্লিষ্ট কর অফিসে নির্দিষ্ট আবেদন ফরমের মাধ্যমে এটি নিতে পারবেন অথবা ঘরে বসেও অনলাইনে E-TIN সার্টিফিকেট নিতে পারেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে এই ফরম পাওয়া যাবে। এরপর মুঠোফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা এক কপি ছবি দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করলে ঘরে বসেই ই-টিআইএন নাম্বার পাওয়া যাবে। আয়কর দেওয়ার প্রথম শর্ত আপনার অবশ্যই হালনাগাদ টিআইএন নাম্বার থাকতেই হবে।

২. জেনে নিন করসীমা ও কর হার

ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার জন্য পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে তিন লাখ টাকা, নারী অথবা ৬৫ বছরের অধিক পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে সাড়ে চার লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নির্ধারিত করসীমা পর্যন্ত শূন্য হার, পরবর্তী ১ লাখের জন্য ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ১৫ শতাংশ পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ২০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট আয়ের উপর ২৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে।

৩. আয়-ব্যয়ের হিসাব 

আপনার কর বছর যেমন ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত সময়ে আয় ও ব্যয়ের সমস্ত হিসাব করে ফেলতে হবে। করসীমা, কর রেয়াত, বিনিয়োগ, জীবনযাত্রার ব্যয় বিবরণী, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ এমনকি ময়লার বিলও রিটার্নে দাখিল করতে হবে। ফলে আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতি দূর হবে। সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিলে শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে পারবেন।  

৪. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নথি

রিটার্ন জমার সময় অবশ্যই আপনাকে কিছু প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাগজপত্র জমা দিতে হবে। চাকরিজীবী হলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্রের সুদের হিসাব ও সনদ, শেয়ার বিপরীতে ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট, বাড়িওয়ালা হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র ও ভাড়া উত্তোলনের রশিদ, ব্যবসায়ী হলে আয় ব্যয়ের প্রামাণিক নথি ছাড়াও পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র ইত্যাদি জমা দিতে হবে। 

৫. কর রেয়াতের প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র

করদাতার কিছু আয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করমুক্ত রেখেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ থাকলে করছাড় পাওয়া যায়। আবার যেসব ক্ষেত্রে উৎসে কর কেটে রাখা হয়, করদাতাকে সেই উৎসে কর কাটার প্রত্যয়ন নিয়ে রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়। এতে উৎসে পরিশোধ করা কর সমন্বয় করে থাকেন করদাতা। আপনি যদি বিনিয়োগ, শেয়ার, কৃষিসহ অন্যান্য অনুমোদিত খাতে কর রেয়াত চান সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করতে হবে। অন্যথায় কর রেয়াত পাওয়া যাবে না। জেনে রাখা ভাল, কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা–মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের জন্য করমুক্ত সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যে কোনো একজন এ সুবিধা ভোগ করবেন।

৬. নিজস্ব ট্যাক্স ফাইল সংরক্ষণ

নতুন করদাতারা সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে ও যাচাই-বাছাই করে তা একটি ফাইলে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করবেন। যাতে যে কোনো সময় যে কোনো উদ্ভূত জটিলতায় তা উপস্থাপন করতে পারেন। 

৭. বিগত সালের ট্যাক্স ফাইল

পুরাতন করদাতারা বিগত বছরের ট্যাক্স ফাইল সঙ্গে রাখুন। হাল বছরের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে বিগত বছরের কাগজপত্র মিলিয়ে নিন। আগের বছরের রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে একটি খসড়া রিটার্ন তৈরি করে তারপর মূল রিটার্ন পূরণ করুন।     

৮. চূড়ান্ত কর ফাইল স্বাক্ষর ও সংরক্ষণ 

যেসব সম্মানিত করদাতা বিজ্ঞ আইনজীবী ও আয়কর প্রাক্টিশনারের মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল করবেন তারা কোনোমতেই খালি বা সাদা রিটার্নে স্বাক্ষর করবেন না এবং স্বাক্ষর করার পূর্বে গত বছরের সম্পদগুলো যথাযথ পরীক্ষা করুন এবং এই বছরের নতুন কোনো সম্পদ থাকলে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। একটি সম্পূর্ণ ফাইল ফটোকপি করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।  

৯. রিটার্ন স্লিপ গ্রহণ ও সংরক্ষণ

আয়কর রিটার্ন কর অঞ্চলে জমার পর জমা রিসিপ্ট পাবেন। স্লিপটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এ স্লিপটিই আপনার রিটার্ন জমা দেয়ার প্রমাণপত্র। 

১০. সর্বনিম্ন কর

করমুক্ত সীমার ঊর্ধ্বে এক টাকাও করের আওতাভুক্ত হলে ন্যূনতম আয়কর দিতে হবে। আয়করের পরিমাণ এলাকাভেদে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা ৪ হাজার টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতার ন্যূনতম করের হার ৩ হাজার টাকা।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা