• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

শিক্ষার মান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মত শিক্ষকরাও সমান দায়ি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

শিক্ষার মান উন্নয়নে কেবল শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জন বেশি প্রয়োজন। শিক্ষকদের একটি অংশের উদাসিনতা, অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রায়শ: অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, শিক্ষকরা শিক্ষা প্রদানকে বাণিজ্যিকিকরণের কারণে কাঙ্খিত সফলতা আসছে না শিক্ষা সেক্টরে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রতি বছর  হাজার হাজার কোটি টাকা প্রদান করছে সরকার। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির জন্যও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও মিলছে না সুফল।  

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষক সমাজের একটি অংশের অদক্ষতা ও গাফিলতি এবং শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা এক প্রকার হুমকির মধ্যে পড়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানের বদলে প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং সেন্টার কেন্দ্রিক পাঠদানে বেশী আগ্রহী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়লে নম্বর বেশী পাওয়া যাবে-এমন কালচার চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে বিষয় ওয়ারী শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে।

ক্লাসে শিক্ষকদের পাঠদানের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সঠিকভাবে তারা ক্লাসে পাঠদান করনে না এমন অভিযোগ মাঝে মধ্যেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়। মূল সমস্যা হচ্ছে, যে বিষয়ে শিক্ষক পাঠদান করছেন সে বিষয়ে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কম। তাই শিক্ষার্থীদের তিনি যথাযথভাবে পড়াতে বা বোঝাতে পারছেন না। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগ উঠে থাকে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্য থেকে।

নৈতিক অিবক্ষয়ের অভিযোগ রয়েছে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ইদানিং প্রায়শ: শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়, যা বিব্রত করছে অভিভাবকদের। ছাত্রীরাও শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ মনে করছে না। অনৈতিক এসকল কর্মকান্ডে রাজি না হলে অনেক ছাত্রী পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগও রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের নকল সরবরাহের মত ঘৃণ্য কাজ করার অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রয়েছে।  তাছাড়া বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ মাঝে মধ্যেই উঠছে। একদিন আগে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দিয়ে চলতি এসএসসি পরীক্ষার খাতায় ওএমআর শীট পূরণ করার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কাঁচপুর সিন্হা স্কুল এন্ড কলেজ। গত শুক্রবার সকালে ঘটনাটি দেখে ভিডিও ধারণ করেন ওই বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক। জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা’ বিষয়ের কয়েক বান্ডেল খাতা মূল্যায়ন করছিলেন ওই বিদ্যালয়ের ৭ম ও ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তাদেরকে দিয়ে একটি বোর্ড পরীক্ষার খাতার উপরে থাকা ওএমআর শীটে যে সকল ঘর পূরণ করতে হয় সেই ঘরগুলো পূরণ করাচ্ছিলেন বিদ্যালয়টির সহকারি প্রধান শিক্ষক আশরাফ উল্লাহ। শিক্ষার্থীরা জানায়, আশরাফ উল্লাহ স্যার খাতার বৃত্তভরাট করার জন্য তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, প্রতি খাতা দেখার জন্য একজন পরীক্ষককে ২৫ টাকা করে সম্মানী দেয়া হয়। এ হিসাবে একেকজন শিক্ষক কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৬০০ খাতা দেখে থাকেন। একজন শিক্ষক খাতা দেখে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পান। কাজেই যে সম্মানী দেয়া হয়, তাতে খাতা দেখতে একজন শিক্ষকের ভিন্ন কোনো উপায় অবলম্বনের প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। তারপরও তারা কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের দিয়ে খাতা দেখানোর মতো অনৈতিক কাজ করে থাকেন। এরফলে পিরিক্ষার্থীদের সঠিক মান মূল্যায়ন নিশ্চিতভাবে ব্যাহত হয়। শিক্ষকরা সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার কারণে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ কলুষিত হয় বলে মনে করেন বোদ্ধারা।

সার্বিকভাবে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একশ্রেনীর শিক্ষকের কারণে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।   

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা