• সোমবার ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৫ ১৪৩১

  • || ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: টাকা তুলে পালিয়েছেন ঠিকাদার

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৪  

খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যাবিশিষ্ট তিনতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যৌথভাবে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স ও মেসার্স শামীম আহসান ট্রেডার্স। প্রায় ১০ কোটি টাকার কাজের মেয়াদ ছিল ৯ মাস। এখনও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা তুলে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, মূল ঠিকাদারের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে কাজটি করছিলেন খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান বাবু। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এলাকাছাড়া হয়েছিলেন তিনি। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশছাড়া হয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, লাইসেন্স অন্যের হলেও সাবেক সংসদ সদস্য কাজটির দায়িত্বে থাকায় তদারকি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজের বরাদ্দ তুলে নিয়েছেন।


কাজের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্সের মালিক জিয়াউল আহসান টিটু খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি বলেন, ‘আমার লাইসেন্সে হলেও কাজটি করছিলেন সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান। তিনি নানা অজুহাতে কাজে কালক্ষেপণ করায় সব দায় এখন আমাদের কাঁধে চেপেছে।’ এ বিষয়ে সাবেক এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ভবন নির্মাণকাজের স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবন ভেঙে সেখানে কয়েকটি গর্ত খুঁড়ে পিলার নির্মাণের জন্য রড খাড়া করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন এভাবে ফেলে রাখায় এরই মধ্যে রডে মরিচা ধরতে শুরু করেছে। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সেখানে মশার বংশবিস্তারও ঘটছে বলে জনিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া সেখানে আর কোনো নির্মাণসামগ্রী দেখা যায়নি।
এদিকে মূল ভবন ভেঙে ফেলায় দাপ্তরিক ভবনে চলছে যাবতীয় চিকিৎসা সেবা। সেখানে জায়গার অভাবে বারান্দা, মেঝে ও সিঁড়ির নিচে রোগীদের থাকতে হচ্ছে। কক্ষ সংকটের কারণে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। বছর দুয়েক আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয় বলে জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী আব্দুল হাকিম। তাঁর ভাষ্য, শুরুতে ঠিকাদার কাজের ব্যপারে যথেষ্ট উদাসীনতা দেখিয়েছেন। কার্যাদেশ পাওয়ার কয়েক মাস পর সেখানে কিছু নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসেন। পরে কয়েকটি পিলার তুলে চলে গেছেন তারা। শোনা যাচ্ছে, ঠিকাদার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।


হাসপাতালের ৩১ শয্যার ভবনটি ভেঙে ফেলার পর থেকে শয্যা সংকট চলছে জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, কক্ষের অভাবে বহির্বিভাগেও চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তিনি। কাজে ধীরগতির জন্য ইতোমধ্যে কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার হাসান মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, কাজটি অন্য কেউ করলেও তারা মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। কিন্তু এখন তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। ঠিকাদারের টাকা তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদার কাজ শুরু করায় রানিং বিল হিসেবে কিছু অর্থ ছাড় করা হয়েছিল। তবে কার্যাদেশ বাতিল হলে অবশ্যই ক্ষতি অনুযায়ী তাদের জরিমানা দিতে হবে।

আজকের খুলনা