• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দাকোপে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২২  

অনাবৃষ্টিতে এবার আমন ধান রোপণে বেশ দেরি হয়েছিল খুলনা জেলার কৃষকদের। যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল তাদের। কিন্তু দেরিতে রোপণ করা হলেও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৫-৭ দিনের মধ্যেই ঘরে উঠবে সোনালি ধান। বাম্পার ফলনে খুশির ঝিলিক বয়ে চলেছে খুলনার নদীভাঙন কবলিত দাকোপ উপজেলার কৃষকদের মুখে। প্রস্তুত হচ্ছেন ধান ঘরে তোলার কাজে। এখন তাদের একটাই প্রার্থনা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন হানা না দেয়।

খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফসলের মাঠে এখন সোনালি ধানের ঝিলিক। কিছু কিছু মাঠে ধান আধাপাকা থাকলেও অনেক মাঠেই এখন ধান পেকে সোনালি রূপ ধারণ করেছে। গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ। উৎসবের আমেজে কৃষক ধান কর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ফসলের মাঠগুলোয় চলছে আমন ধান কাটার আয়োজন।

কৃষকরা জানান, এবার আমন ধানের মৌসুমে একদিকে চলেছে তীব্র তাপদাহ, অন্যদিকে অনাবৃষ্টি। ফলে এবার আমন রোপণ হবে কি না তা নিয়েই সংশয় ছিল কৃষকদের মধ্যে। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে সামান্য সময়ের জন্য হলেও স্বস্তির বৃষ্টির দেখা মেলে। সেই সামান্য বৃষ্টিকে কাজে লাগিয়ে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ের পর জমিতে আমন রোপণ করা হয়।

দেরিতে যেসব জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে, সেগুলোয় যদি সামনের দিনগুলোয় মাঝে মাঝে বৃষ্টি না হয়, তাহলে ফলন ভালো হবে না এমন ভাবনা ছিল কৃষকদের। তবে মৌসুমের শেষের দিকে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত ও সবশেষে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া আর কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সেই শঙ্কা দূর হয়ে যায় কৃষকদের। দাকোপ উপজেলায় আমনের ভালো ফলন হতে চলেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। দেশি, স্থানীয় বিভিন্ন জাতসহ ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৭৬, ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৩০, বি আর ২৩, বি আর ১১, বি আর ১০ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে এ পরিমাণ জমিতে।

কৃষকরা জানান, এসব জাতের ধান চাষের ক্ষেত্রে সেচ ও রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হয়। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হওয়ায় সহজেই তা দমন করা যায়। এতে গত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় ধানের ফলন ভালো হচ্ছে।

চালনা পৌরসভা এলাকার চাষি ভূপেন মণ্ডল, আরশাদ আজিজ, কমলেশ মজুমদার জানান, জমিতে আমনের চারা রোপণ করার পর থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রোগবালাই ও পোকামাকড় বিশেষ করে বাদামি ফড়িং পোকা সম্পর্কে সচেতন করে কৃষকদের। আমনের জমিতে রোগবালাই, পোকামাকড় দেখামাত্রই কীটনাশক স্প্রে করে দমন করা হয়েছে। আমরা আশা করি এবার আমনের ফলন পুরোপুরিভাবে পাওয়া যাবে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, প্রতিবছর বাদামি ফড়িং পোকা আক্রমণে ধানের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাদামি ফড়িং পোকা ও বিভিন্ন রোগবালাই দমন পদ্ধতি জানানো ও এ সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছেন। এ ছাড়াও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতিদিন এলাকা অনুযায়ী কৃষক সমাবেশ করেছেন। সময়মতো সেচ ও সার জমিতে প্রয়োগ করা ছাড়াও রোগবালাই ও বাদামি ফড়িংসহ পোকামাকড় সম্পূর্ণ দমন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে এ অঞ্চলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে চলতি মৌসুমে রোপা-আমনের ফলন বেশি হবে।

উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক পরিচর্যা ও রোগবালাই কম হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।দু’চোখ মেলে তাকালে দিগন্তজুড়ে সবুজের সমারোহে সোনালি ধানের শীষ দোল খাচ্ছে বাতাসে। পাকা সোনালি ধানের আভায় স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। ধানের ভালো ফলনের ভারে ধানের শীষ নুয়ে পড়েছে মাটির দিকে। দিন যতই যাচ্ছে; ধানের রূপ ততই বদলে যাচ্ছে। আগামী ৫-১০ দিন পর গোটা দাকোপে জমি থেকে ধান কাটা শুরু হবে। তাই এ অঞ্চলের কৃষক প্রস্তুতি নিচ্ছেন নবান্ন উৎসবের।

উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভালো ফলন পেতে মাঠ পর্যায়ে আমি ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়েছি। এবার দাকোপ উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ১৯ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে এবং সেটি অর্জন হয়েছে। চালনা পৌরসভাসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণের আওতায় কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ১৩০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে রোপা আমন ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। চলতি রোপা আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, যা ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা