• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনায় বোরোর মাঠে মানচিত্রে বঙ্গবন্ধু ধান

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২২  

জিংক সমৃদ্ধ নতুন জাতের ধান ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ বা ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’। পাঁচ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এ জাত আবিস্কার করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ নামকরণ করা হয়। এই জাতের ধান উৎপাদনে সময় অনেক কম লাগবে, ফলনও বৃদ্ধি পাবে। রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমণের শঙ্কাও কম।
খুলনার দাকোপ ছাড়া বাকী আট উপজেলায় প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে বঙ্গবন্ধু জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। তন্মাধ্যে রূপসা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে এ জাতের ধান। এছাড়া রূপসা উপজেলার নৈহাটী ইউনিয়নের জাবুসা গ্রামের ১৫ কৃষক সম্মিলিতভাবে জমিতে সবুজ ও বেগুনি রঙের সংমিশ্রণে তৈরি করেছে বাংলাদেশের মানচিত্র। মানচিত্রের ভিতরে রয়েছে সবুজ রংয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ জাতের ধানের চারা। আর পাশে ব্যবহার করা হয়েছে বেগুনি রঙের ধানের চারা। বেড়ে ওঠা দুই রঙের ধানের চারায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের প্রতিকৃতি। যার ভিতরে লেখা আছে, ‘মুজিব শতবর্ষ বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’। যা সাড়া ফেলেছে ওই এলাকায়। প্রতিদিন শস্যক্ষেত্রে বিশাল চিত্রকর্ম দেখতে ভিড় করছেন অনেকে। রূপসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ শস্য মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে।
জাবুসা গ্রামের চাষি সুলতানুর রহমান মুলতান জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জমি প্রস্তুত করে নতুন জাতের বীজ বপন করেছেন। কম সময়ে ভালো চারা পাওয়ার পর তা জমিতে রোপণ করেছেন। ধানের চারা বেশ বেড়ে উঠেছে।
সেখানকার কয়েকজন চাষি বলেন, সবুজ ধানের মধ্যে আলাদা বেগুনি ধান রোপণ করে বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফলে অন্য অঞ্চলের চাষিরা ধানের ক্ষেত দেখতে আসছেন। চাষিদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক অভিভাবকও তাদের সন্তানদের নিয়ে ধান ক্ষেতে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখতে আসছেন।
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, নতুন জাতের ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ এর প্রতি চাষিদের আকৃষ্ট করতে দুই রঙের চারা রোপণ করে মানচিত্রের ন্যায় প্রদর্শনী ব্লক তৈরি করা হয়েছে। মানচিত্র ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে বেগুনি রঙের ধানের চারা। বেগুনি রঙের ধানের চারা আনা হয়েছে গাইবান্ধা থেকে। তিনি আরও বলেন, জেলা অফিস থেকে ৫ কেজি বীজ পেয়েছিলাম। পরে নিজেদের উদ্যোগে আরও ৬০ কেজি বীজ সংগ্রহ করে চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহ করি।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, একজন চাষীকে ৫ কেজি বীজ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। এ ধান শুধু খাদ্যের চাহিদা নয়, পুষ্টির অভাব পূরণেও ভূমিকা রাখবে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উচ্চ জিংক ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এ জাতের ধান সোনালি রঙের নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো। হাইব্রিড ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ উফশী জাতের হওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ কম। এটি বোরো মৌসুমের জাত। ব্রি ২৮ ও ২৯ ধান উৎপাদনে ১৫৫-১৬০ দিন সময় লাগে। সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ কৃষক ঘরে নিতে পারবে ১৪৫-১৪৮ দিনের মধ্যে। বীজতলায় ৩৫ দিন বয়স থেকে এ জাতের চারা রোপন করা যায়। ১৪৮ দিনের মধ্যে ফসল কাটার মত উপযুক্ত হয়ে উঠে। বিআর-৭৪ ও বিআর-৮৪’র চেয়ে এর ফলন বেশি। উপযুক্ত পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশে প্রতি হেক্টরে ৮.৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছের উচ্চতা ১০১ সেন্টিমিটার। চালের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো এবং ভাত ঝরঝরে। এছাড়া এ ধান খাদ্যের চাহিদা ও পুষ্টির অভাব পূরণে ভূমিকা রাখবে।
কৃষি অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট যে ধানগুলো রিলিজ করে সেটা বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে নামকরণ করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ উৎসর্গ করা হয়। আর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে ও পুষ্টিকর এই ধানটির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে বাংলাদেশের মানচিত্রের মধ্যে রোপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক আবাদ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ধানের বৃদ্ধি অনেক ভাল। দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলে তিনি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, খুলনায় গত দু’ বছর যাবৎ হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বেড়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় খাদ্যের সংকটে অবদান রাখছে। এসিআই, ব্রাক ও সরকারি হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড জাতের চাষাবাদ করা হয়েছে বোরোর মাঠে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা