• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর মৃত্যুর ১৩ বছর পূর্তি আজ

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২১  

আজ ৮ ডিসেম্বর। ৭১’র বীরাঙ্গনা গুরুদাসী মাসীর মৃত্যুর ১৩ বছর পূর্তি। ২০০৮ সালের আজকের দিনে কপিলমুনিতে সরকারের দেয়া বাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কোন সংগঠন ঘটা করে পালন করছে না দিবসটি। মৃত্যুর ১৩ বছর অতিবাহিত হলেও তাঁর কপিলমুনিস্থ বাড়িটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা সর্বহারা গুরুদাসীর বাড়িটি সংরক্ষণে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী সেই প্রথম থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে আসলেও দাবির প্রতি সুবিচার হয়নি আজও।

তথ্যানুসন্ধানে স্থানীয় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসী জানায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকবাহিনীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন গুরুদাসী ও তার পরিবার। তার বাড়ি উপজেলার দেলুটির বারোআড়িয়া গ্রামে। স্বামী গুরু পদ মন্ডল পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। গুরদাসী দেখতে সুন্দরী হওয়ায় পাকদোসররা তার উপর হামলে পড়ে পাশবিক নির্যাতন শুরু করে। কথিত আছে স্বামী এতে বাঁধা দিলে তার চোখের সামনে স্বামী, দু’ছেলে ও শিশুসহ দু’মেয়েকে গুলি করে হত্যা করে।

আরো কথিত রয়েছে যে, গুরুদাসীর ছোট মেয়ে যখন মায়ের কোলে দুধ খাচ্ছিল তখন পাক দোসররা আকষ্মিক ওই বাড়িতে হানা দেয়। এক পর্যায়ে তারা মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে ছিনিয়ে নিয়ে কাঁদা মাটিতে পুতে মেরে ফেলে। এসময় সুন্দরী গুরুদাসীকে তার নিজ বাড়িতে আটকে রেখে পাক দোসররা নির্যাতন শুরু করে। এতে গুরুদাসী প্রাণে বেঁচে থাকলেও মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করে নিজেদের কাছে রেখে দেন। দেশ স্বাধীনের পর মানসিক ভারসাম্যহীন গুরুদাসীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেও সেখান থেকে চলে আসেন তিনি।

শুরু হয় তার ভবঘুরে জীবন-যাপন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে এক সময় ফের চলে আসেন পাইকগাছার কপিলমুনিতে, স্থায়ী হন সেখানে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে তিনি গুরুদাসী মাসী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ভিক্ষায় ছিল তার জীবন-জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় লাঠি হাতে মানুষকে ভয় দেখিয়ে, হাত পেতে দু/পাঁচ টাকা চেয়েই চলত তার জীবন-জীবিকা। উপজেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এমন কোন মানুষ নেই যে, তাকে চিনতো না।

পাগলীবেশে সারাক্ষণ বিভিন্ন প্রান্তে লাঠি হাতে ঘুরে ঘুরে পথচারীদের ভয় দেখিয়ে দু/পাঁচ টাকা উপার্জনকারী মানুষটি সব সময় বেশি কথা বলতেন। অতি প্রলাপের মূল বিষয় ছিল, কবে তার স্বামী-সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার হবে? তার মাথা গোঁজার ঠাঁই বা আশ্রয়ের জন্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট স ম বাবর আলী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সাবেক সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব) মিহির কান্তি মজুমদার স্থানীয় কপিলমুনিতে সরকারি জায়গায় তার বসবাসের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দেন।

বীরঙ্গনা গুরুদাসী মানবেতর জীবনযাপনের একপর্যায়ে ২০০৮ সালের ৮ ডিসেম্বর কপিলমুনিস্থ সরকারের দেয়া বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবরে সে সময় ছুটে আসেন এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা, প্রশাসনসহ সর্ব স্তরের সাধারণ মানুষ। যুদ্ধকালীন সর্বহারা গুরুদাসীর সরকারি কোন তালিকায় নাম না থাকায় সাধারণ মানুষের মত শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করা হয়। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গঠন করা হয়ছিল বীরঙ্গনা গুরুদাসী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ।

মৃত্যুর পর নেতৃবৃন্দ তার বসবাসের বাড়িটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার তৈরির ঘোষণা দেন। যদিও অদ্যবধি প্রতিশ্রুতির কোন বাস্তবায়ন হয়নি। অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে গুরুদাসী মাসির স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবেশীরা বাড়িটিতে বিভিন্ন মালামাল রাখার স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করছে। বাড়ির সামনে মোটর সাইকেল স্ট্যান্ডের লোকজনসহ স্থানীয়রা সেখানে মূত্র ত্যাগ করে।

বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যাপারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট স ম বাবর আলী জানান, গুরুদাসীর বাড়িটি লাইব্রেরী করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে বিশেষ করে কপিলমুনি মুক্ত দিবসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবসকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি স্থানীয়দের জোর দাবি, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক রণাঙ্গন কপিলমুনি কেন্দ্রীক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি যাদুঘর স্থাপনে বীরাঙ্গনা গুরুদাসীর বাড়িটিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি লাইব্রেরী ঘোষণা করা হোক।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা