• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ভৈরব নদের ওপর নির্মিত ব্রিজটি এখন গলার কাঁটা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২১  

ব্রীজ আছে রাস্তা নেই। অথচ যানবাহন ওঠা-নামা ও জনসাধারণ চলাচলে সংযোগ সড়ক থাকা বাধ্যতামূলক। আর এ বাধ্যতামূলক শব্দটি কেটে দিয়েছে এলজিইডি। ফলে রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের সাবেক ভৈরব নদীর ওপর নির্মিত ‘তালতলা ব্রিজটি’ এখন এ  অঞ্চলের মানুষের গলার কাঁটা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।    সূত্রে জানা গেছে, রূপসা উপজেলার সাবেক ভৈরব নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ‘তালতলা ব্রিজ’। যার মাধ্যমে উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়ন ও টিএসবি ইউনিয়নবাসীর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়। কিন্তু ব্রিজ নির্মানের দীর্ঘদিন অতিক্রম হওয়ার পর ব্রিজের এ্যাপ্রোচ রোড (দুই পাশের রাস্তা) না থাকায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন করার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল তুলেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, ‘ব্রিজের এ্যাপ্রোচ রোডের জমি নিয়ে জটিলতার কারনে আমরা কাজ করতে পারছি না। জমি অধিগ্রহণ নিয়েও কিছুটা জটিলতা রয়েছে। এছাড়া বর্ষার কারনে কাজ বন্ধ রয়েছে। খুব দ্রুত জমির সমাধান না হলে নকশা অনুযায়ী আমরা রাস্তার কাজ করব।’
এলাকাবাসী সূত্রে গেছে, ব্রিজ নির্মানের ফলে দু’টি ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকাবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিন্তু ব্রিজ নির্মানের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজের দুই পাশের রাস্তা নির্মাণ করেনি। ব্রিজের ঘাটভোগ ইউনিয়নের নারখেলী চাঁদপুর অংশের রাস্তা নির্মানে জটিলতার সৃষ্টির কারণে বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃৃপক্ষ জানান, নকশা অনুযায়ী রাস্তা করলে কোনো ভারী যানবাহন ব্রিজ থেকে ওঠা-নামা করতে পারবে না। এমনকি ইজিবাইকও ব্রিজের ওপর উঠতে মারাত্মক কষ্ট হবে। ব্রিজ থেকে নেমেই চাঁদপুর অংশে যে কার্ভ রয়েছে, সেটাই মূলতঃ সব সমস্যার কারণ। এজন্য ব্রিজের রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে ব্রিজ নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও রাস্তার কাজ করা হচ্ছে না।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘তালতলা-আলাইপুর- শেখপুরা এফআরবি (পালঘাট) সড়কে ১ হাজার মিটার চেইনেজ ৪০ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার ব্রিজ’ (স্থানীয়ভাবে তালতলা ব্রিজ নামে পরিচিত) নির্মানের প্রকল্প ব্যয় ৩ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এটির ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্মানের কাজ পেয়েছিলেন যৌথভাবে মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স এ্যান্ড মেসার্স কামরুল এন্টারপ্রাইজ। ব্রিজটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেন। অসম্পূর্ণ রয়েছে ব্রিজের দুই পাশের এ্যাপ্রোচ রোডের ২০০ মিটারের কাজ, যা চওড়া হওয়ার কথা ২৪ ফুট। 
নারিকেলি চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা তুষার কুমার পাল বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণ শেষ হয়েছে অনেক আগে। গেল রোজার ঈদ থেকে কাজ বন্ধ। ব্রিজ হইছে, কিন্তু রাস্তা নির্মাণের কোনো খবর নেই। রাস্তাটি নির্মাণ হলে তালতলা ও নারখেলী চাঁদপুর গ্রামসহ দু’টি ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে।’ নারিকেলী চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা লিটন পাইক বলেন, ‘সংযোগ সড়ক হলে অত্র এলাকার মানুষ অল্পসময়ের মধ্যে কাজদিয়া উপজেলা সদরে যেতে পারবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্রিজের কাজ শেষে হয়ে গেছে অনেক আগে কিন্তু সংযোগ সড়কের কোনো অগ্রগতি নেই। আর সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি এখন এলাকাবাসীর কাছে গলার কাঁটা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে।’ একই এলাকার শোভা রানী পাল বলেন, ব্রিজ আছে কিন্তু রাস্তা নেই, তাহলে এই ব্রিজের কি কোনো মূল্য আছে? স্থানীয় ইউপি সদস্য বিনয় হালদার জানান, ‘ব্রিজের রাস্তা নির্মাণে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কয়েক দফা রাস্তা এ্যাকোয়ারের জন্য জমি মাপামাপিও হয়েছে।’ 
রূপসা উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ‘ব্রিজের নারখেলী চাঁদপুর অংশের রাস্তার কার্ভ সংশোধন ও ব্রিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ১২৫ শতক জমি অধিগ্রহনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফাইলটি বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রয়েছে। এটার অনুমোদন হলে ১৭-১৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। আর যদি অনুমোদন না হয় তবে নকশা অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে বলা হবে।’

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা