• শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই : প্রধানমন্ত্রী

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছদ্মবেশে জঙ্গিবাদের বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই বলে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না। তাদের প্রধান শক্তি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ১৮ ধারায় নিষিদ্ধ করা হবে।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি এবং আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষক লীগ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী আবারও জাতিসংঘ (ইউএন) এবং অন্যান্য দেশের কাছে তাদের দক্ষতার মাধ্যমে দেশব্যাপী তাণ্ডব চলাকালীন প্রতিটি ঘটনার তদন্তে অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন, জামায়াত ও শিবির আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘সবাইকে এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে হবে এবং আমি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন তাঁর জীবননাশের প্রচেষ্টা আগের ঘটনার মতো বারবার আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি পাত্তা দিই না। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন এবং তিনি তা নিয়েও নেবেন।

জনগণের কল্যাণে যা যা করা দরকার, আমি সবই করব।’
সাম্প্রতিক সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের আড়ালে জঙ্গিরা তাদের হিংস্র দাঁত দেখিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বস্ব হারিয়ে কাছের এবং প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা তিনি জানেন। তিনি বলেন, ‘সুতরাং আমি প্রতিটি জিনিসের (হত্যাযজ্ঞের) তদন্ত চাই যে এর পেছনে কারা রয়েছে, কিভাবে এবং কী কী ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি আরো বলেন, তাঁর সরকার সাম্প্রতিক সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যুর তদন্তের জন্য এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

কমিশন গঠনের পর বিপুলসংখ্যক ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় এর পরিধি সম্প্রসারণ করে তিনজন সদস্য করা হয়।
শেখ হাসিনা প্রতিটি বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দেশ চায়, তারা বিশেষজ্ঞও পাঠাতে পারে। আমি বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা এর জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁদের নির্মিত সম্পত্তি ধ্বংস করে দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তাঁরা আর সহ্য করবেন না। তিনি আরো বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য দেশব্যাপী তাণ্ডব চালানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন ধ্বংসস্তূপে রূপ নেওয়ার আগে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করেছে। তারা মিছিল করে যেখানে যেতে চেয়েছে, তাদের সেখানে যেতে দিয়েছে। তিনি নিজেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলেছেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদরত শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ওপর সরকারি সংস্থার হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে মেরে ধরে, শিক্ষকদের রাস্তার ওপর ফেলে হাতকড়া লাগিয়ে হার্ডলাইনে গিয়ে আন্দোলন দমন করেছিল, তাঁর সরকার সে পথে যায়নি এবং শক্তিও প্রয়োগ করেনি, বরং তাদের দাবি মেনে নিয়েছে। আসলে তাদের দাবিটা কী? সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্টে পক্ষভুক্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল হওয়ায় সরকার আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। আপিল বিভাগ শুনানির দিন ধার্য করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন অর্থাৎ কোটা বাতিলই ছিল। পরে আপিল বিভাগের রায়ও ছাত্রদের চাহিদার চেয়ে বেশিই এসেছে। আর এটা তো তাঁরই দাবি ছিল, সেখানে আন্দোলনের আর কী থাকে! সেখানে আজকে যে ঘটনাগুলো ঘটল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশব্যাপী মিথ্যা অপপ্রচার সমানে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না। আমি তো নিজেই সব কিছু হারিয়েছি এবং গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা ও সরাসরি গুলি করে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে এবং আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তার পরও আমি সাহস নিয়ে কাজ করে গেছি। ভয়ও পাইনি, পিছুও হটিনি। কারণ আমার লক্ষ্য এ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন—সে কাজটা আমাকে করতে হবে।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, “আমি বলতাম ‘টাইম ইজ টু শর্ট’। কেননা যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়ে ঘাতক আমাকে আঘাত করতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আঁশ, আমি মানুষের জন্য কাজ করব।” তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য স্থির করেছিলাম যে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা জায়গায় নিয়ে আসব, আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের যে মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল, তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম। বিশ্বে বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছিল। আজকে আমরা কী দেখি, সব জায়গায় বাংলাদেশ সম্পর্কে আবার একটা নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি, সেটা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনা ঘটিয়ে আজকে সেই মান-সম্মান সব নষ্ট করা হচ্ছে। এটার বিচার আমি জনগণের কাছেই দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এমনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পোড়ানো হলো—ঠিক ফিলিস্তিনের গাজায় যেভাবে হাসপাতালে বোমা হামলা করে ধ্বংস করা, শিশু হত্যা, মানুষ হত্যা—সেই একই ঘটনা যেন এখানে ঘটানো হচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের। তিনি বলেন, একটা কোটা আন্দোলনের নাম দিয়ে এভাবে একটা নাশকতা ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা! যে জন্য তিনি ১৭ তারিখ টেলিভিশন ভাষণে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শিক্ষক ও অভিভাবকদের বলেছিলাম যে আপনাদের সন্তানদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, আপনারা সন্তানদের বের হতে দিয়েন না। কারণ আমি তো জানি এ দেশে জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কত দূর কী করতে পারে। আমি তাদের সতর্ক করেছি যে আপিল বিভাগের রায়ে শিক্ষার্থীদের হতাশ হতে হবে না। তাদের যেটা দাবি, সেটা এসে যাবে। কারণ আদালত ও আইন মেনেই সবাইকে চলতে হয়।’

তিনি বলেন, তার পরও আজকে বাংলাদেশে এতগুলো প্রাণ যে ঝরে গেল, এর দায়দায়িত্ব কার? একটা জিনিস গেলে আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু জীবন গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘যাঁরা আপনজন হারিয়েছেন, যে মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছে, তাদের কী কষ্ট, সেটা আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই প্রতিটি জিনিসের তদন্ত হোক। কারণ এর পেছনে কী কী ভাবে কী কী ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসুক। আমি জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, তারা যেন তাদের বিশেষজ্ঞ পাঠায়, অন্য কোনো দেশ যদি চায়, তারাও যেন বিশেষজ্ঞ পাঠায়। কারণ আমি চাই এই ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

আজকের খুলনা