• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার

প্লাস্টিক শিল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজার

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২  

বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের অভ্যন্তরীণ বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর রপ্তানির পরিমাণ সরাসরি ও পণ্য সরবরাহ সেবা মিলে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। প্রতি বছর এ সেক্টর থেকে সরকারের কোষাগারে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। ৫ হাজার ৩০টি কারখানায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ প্লাস্টিক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

২০২০-২১ অর্থবছরে এ শিল্প থেকে ৯৮২.৬৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথানুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্লাস্টিক শিল্পে ৫৯০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। বিশ্ববাজারের ০.০১ শতাংশ বাংলাদেশের শেয়ার রয়েছে। রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৯তম। আর রপ্তানিতে দেশের প্লাস্টিক শিল্প খাতের অবস্থান ১২তম। তবে পণ্য সরবরাহ সেবা রপ্তানি যুক্ত হলে এ অবস্থান হবে ষষ্ঠ। সূত্র জানিয়েছে, প্লাস্টিক শিল্প ষাটের দশকের শেষ দিকে এবং সত্তরের দশকের মধ্যে শুরু হয়। আশির দশকে এ শিল্পের ধারাবাহিক আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার আগে কলকাতায় প্লাস্টিক শিল্প-কারখানায় নিযুক্ত কিছু বাংলাদেশি শ্রমিক ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। তারা সঙ্গে নিয়ে আসেন হস্তচালিত কিছু প্লাস্টিক প্রযুক্তি। পরবর্তীতে এসব প্রযুক্তি আধুনিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসে। তখন প্লাস্টিক শিল্পের শুরুতে চুড়ি, বালা, খেলনা, জগ, মগ ইত্যাদি পণ্য তৈরি হতো। বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। এখন গৃহস্থালি থেকে শুরু করে জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্লাস্টিক জড়িত। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কন্টেইনার, স্যালাইন ব্যাগ, ব্লাড ব্যাগ, চোখের লেন্সসহ অতি প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গও প্লাস্টিকের তৈরি। এ ছাড়া খেলনা, বিভিন্ন প্রকারের মোড়ক, র‌্যাপিং, ঘরে ব্যবহৃত টিন, দরজা, জানালা, টেবিল, চেয়ারসহ বিভিন্ন প্রকারের পণ্য প্লাস্টিকের তৈরি। 

দেশে এসব প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে ছোট, মাঝারি, বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ৩০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্লাস্টিক শিল্প আরও বিকশিত হচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি করায় তা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। প্রতি বছর প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণও ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে গার্মেন্টস, খাদ্যশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে প্লাস্টিক শিল্প ব্যাপক অবদান রাখছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। সূত্র মতে, দেশের তৈরি পোশাক ও নিট শিল্প, ফ্রোজেন ফিস, জুট টোইয়ান, ফার্মাসিউটিক্যালস আইটেম রপ্তানিসহ বিভিন্ন রপ্তানিকারক শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক র‌্যাপিং বা মোড়কের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ হিসেবে প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার, শপিং ব্যাগ, ওভেন স্যাক রপ্তানি হয়। এ ছাড়া রপ্তানির তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন রকমের খেলনা সামগ্রী, প্লাস্টিক ওয়েস্ট (স্ক্রাপ) টুথ ব্রাস, বলপেন, দেয়াল ঘড়ি, হ্যান্ড গ্লোবস, প্লাস্টিক ফুলসহ নানা রকমের প্লাস্টিক আইটেম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৮২.৬৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।  প্রতি বছরই রপ্তানি বাড়ছে, যা দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্প সরাসরি ও পণ্য সরবরাহ সেবা মিলে ষষ্ঠ অবস্থানে অবস্থান করছে। 

সূত্র জানায়, প্লাস্টিক এক্সেসরিজ পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশের বাজারেও রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০ শতাংশ হারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকার প্লাস্টিকের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছিল। সম্প্রতি কাঁচামালের ফ্যক্টরিও বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। ফলে আমদানি নির্ভশীলতা কমবে। প্রায় সব ধরনের বিশ্বমানের আধুনিক পণ্যসামগ্রী এখন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে।  বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামিম আহমেদ বলেন, আগে প্লাস্টিকের কাঁচামাল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হতো। বিশেষ করে  মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করা হতো। সম্প্রতি কাঁচামালের ফ্যাক্টরি বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। ফলে আমদানি নির্ভশীলতা কমছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যাপক পরিমাণে রিসাইক্লিং হচ্ছে। দেশে বিভিন্নভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগৃহীত হয়ে থাকে এবং তা থেকে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে দানা তৈরি করে বিভিন্ন প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা