• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বঙ্গবন্ধুর হাতেই খুলনায় আওয়ামী লীগের যাত্রা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২  

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। খুলনায় কংগ্রেস এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তরা পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমায়। মুসলিম লীগ একক আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। যদিও এখানে চীন ও সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি সাংগঠনিক কাঠামো ছিল, অতি গোপনে। পাকিস্তান জামানায় প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের সুসংহত সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অবর্তমানে আঞ্চলিক স্বার্থ ও ভাবাদর্শগত পার্থক্যের জন্যে পূর্বাংশে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এর দাবি ওঠে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়। পূর্ব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অভ্যন্তর থেকে শ্লোগান ওঠে “লাখো ইনসান ভূখা হায়, ইয়া আজাদী ঝুটা হায়”। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ক্ষমতাসীন সরকার এর বিরোধিতা করতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের রাজনৈতিক সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর এটাই প্রথম বিরোধী দল। আওয়ামী মুসলিম লীগ নামকরণ, ম্যানিফেস্টো ও কর্মসূচি স্বাতন্ত্র বজায় রাখে।

দলের ম্যানিফেস্টো পূর্ণ গণতন্ত্র, পূর্ণ বাক স্বাধীনতা, সার্বজনীন ভোটাধিকার, অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এর দাবি তোলা হয়। খসড়া ম্যানিফেস্টোর চেতনা মূলে ছিল গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক সংগঠন ঢাকাতে আত্মপ্রকাশ করার পরও খুলনায় দলের কোন কাঠামো গড়ে ওঠেনি। যদিও তখনকার দিনে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠেনি। মুসলিম লীগের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো খুলনায় কেউ ছিল না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৪০ সদস্যের মধ্যে খুলনার সন্তান শেখ আব্দুল আজিজ অন্যতম। আওয়ামী মুসলিম লীগ জন্মলগ্নে যে ১২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে তার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার কোন প্রতিনিধি এখানে ছিল না।

শেখ মুজিবুর রহমান অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলা মহাকুমায় কমিটি গঠনের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি তৎপর হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এ্যাড. আব্দুস সালাম খান কে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনায় কমিটি গঠন করতে আসেন। খুলনায় বয়স্ক কোন ব্যক্তি সে সময়ে নতুন এ রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হননি। আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ আব্দুল আজিজকে সভাপতি ও বয়রা এলাকার আইনজীবী মোঃ মমিনউদ্দিন আহম্মেদকে সম্পাদক করে খুলনা জেলা কমিটি গঠন করা হয়।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন-২০১৫ উপলক্ষে সুভ্যেনিরে উল্লেখ করা হয়, সময়টা ১৯৫১ সালের দিকে। নয়া এ কমিটির পক্ষ থেকে খুলনা জেলায় থেকে ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আট জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে বাগেরহাট মহাকুমার মোরেলগঞ্জ, কচুয়া ও শরণখোলা থেকে আওয়ামী মুুসলিম লীগের শেখ আব্দুল আজিজ, রামপাল, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা থেকে তৈয়েবুর রহমান, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া থেকে ব্যরিস্টার আব্দুল গনি খান, খুলনা সদর, দৌলতপুর, ফুলতলা ও তেরখাদা থেকে এ এফ এম আব্দুল জলিল, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর থেকে জি এম ওকালত আলী, তালা ও কলোরোয়া থেকে মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, দেবহাটা ও আশাশুনি থেকে কৃষক শ্রমিক পার্টির এ্যাড. মোঃ এনায়েত উল্লাহ এবং বাগেরহাট, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট থেকে একই দলের সৈয়দ মোস্তা গাউসুল হক নির্বাচিত হন।

নব গঠিত আওয়ামী লীগের এটি বড় সাফল্য। এ্যাড. মুহাম্মদ আব্দুল হালিম রচিত শতাব্দীর স্বাক্ষী এ এইচ দেলদার আহম্মেদ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী আব্দুল গনি খানের পক্ষে ডুমুরিয়ায় এক নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী মুসলিম লীগ এর সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতা করেন।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে ১৯৪৯ সালের ২৮ জানুয়ারী তৎকালীন যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান খুলনায় আসেন। খাদ্য সংকট মোকাবেলার জন্য সরকারী নির্দেশনা ছিল এক জেলা থেকে ধান চাল অন্য জেলায় যাবে না। ইতিহাসের পাতায় এটি কর্ডন প্রথা হিসেবে পরিচিত। ধান কাটার জন্য অগ্রাহায়ণ-পৌষ মাসে ফরিদপুর. গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর ও শরিয়তপুর থেকে দাওয়ালরা খুলনায় আসত। দাওয়ালদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান খুলনায় এসে আন্দোলন করেন। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম চৌধুরীর সাথে বৈঠক করেন। বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তৎকালীন বড় লাট খাজা নাজিম উদ্দিনকে টেলিগ্রাম করে জানান।
 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা