• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বিদেশি মিশনে দক্ষ আনসার সদস্য পাঠানো হবে

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বাংলাদেশে বর্তমানে ৬১ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য কর্মরত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় দেশের বিভিন্ন সংকটময় মুহূর্তে বিশেষ করে সবকটি নির্বাচনে সরকারের হয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে অতন্ত্র প্রহরীর ভুমিকা নিয়ে কাজ করছে।

গ্রামের সেই সুশীতল ছায়া নিবিড় পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে  আনসার সদস্যরা এখন মন্ত্রীদের বাসাবাড়িতেও অতন্ত্র প্রহরী হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সরকারি  বেসরকারি স্থাপনাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশাল এই বাহিনীর সদস্যরা।

আগামীতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত এসব আনসার সদস্যদের বিদেশি মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ আসনসার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ।

মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশে তাদের যোগ্যতার সাক্ষর রাখতে পেরেছে বলেই এখন তাদেরকে বিদেশি মিশনগুলোতেও পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একটি আইন পরিবর্তনের কাজ চলছে। আইনটি বাস্তবায়ন হলেই খুলে যাবে আনসারদের ভাগ্য।

আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আনসারের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আনসার বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারে মহাপরিচালক আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আনসার ব্যাটালিয়ন সমূহের জন্য ১৯৯৫ সালে প্রণয়নকৃত আইনটিতে শৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয়াদি উপযুক্তভাবে উল্লেখ না থাকায় বর্তমান সরকার মন্ত্রিপরিষদে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এটি 'আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০১৯' নামে বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাভের পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভেটিং সম্পন্ন হলেই মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে। রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের পর তা আইনে রূপান্তরিত হবে।

আনসার মহাপরিচালক বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আনসার বাহিনী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালনসহ সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে এ বাহিনীর সদস্যরা সবসময়ই কর্মদক্ষতা ও সফলতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। দেশের জাতীয় সংকটময় ও জরুরি মুহুর্তে বাহিনীর কর্মতৎপরতা এ বাহিনীকে সরকারের এক নির্ভরযোগ্য অংশে পরিণত করেছে।

এ পর্যন্ত আনসারের সফল এই মহাপরিচালক বলেন, জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্য-সদস্যাদের অংশগ্রহণ বাহিনীকে করেছে গৌরবান্বিত। জাতিকে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ বাহিনীর অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালন প্রশংসনীয়। ইংরেজি নববর্ষ বরণের সময়ে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁরা বলিষ্ঠ ও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৪০,১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় পাঁচ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং জীবন দিয়ে ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তা রক্ষায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।

মহাপরিচালক বলেন, প্রতিবছর দেশের জাতীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে জননিরাপত্তা বিধান ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাহিনীর সদস্যদরে অবস্থান এবং অবদান সুস্পষ্ট। ব্যাটালিয়ন ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে। বিগত দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১,৫৭,৮৭০ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবং বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মোবাইল কোর্ট ও ভেজাল বিরোধী অভিযানে বাহিনীর সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করে।

শরীফ কায়কোবাদ বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যাটালিয়ন এবং সাধারণ আনসার সদস্যরা সারাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের পাশাপাশি দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলসহ সারাদেশের সমতল এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাস দমন, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মৌলবাদ এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা এবং শিল্প কারখানার আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে 'সাধারণ আনসার' গঠন করা হয়। বর্তমানে দেশের বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, ইপিজেডসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪,২১৪ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় প্রায় ৫০ হাজার জন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ঈদ, পূজা-পার্বনসহ বিশ্ব ইজতেমা, বর্ষবরণ, শপিং মল, বাণিজ্য মেলা ও বই মেলা, রেল স্টেশন, ট্রাফিক কন্ট্রোলসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাধারণ আনসার সদস্য-সদস্যারা জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।

আসনার ও গ্রমপ্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য এবং সর্বজন স্বীকৃত। বিগত ঘূর্ণিঝড় 'ফণী' ও 'বুলবুল' মোকাবেলায় দুর্যোগ কবলিত উপকূলীয় এলাকায় সর্বমোট ১,৫৫,০০৪ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যা সফলভাবে অংশগ্রহণ করেন।

দেশব্যাপী ডেঙ্গু বিস্তার প্রতিরোধে আনসার-ভিডিপির প্রতিটি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সদস্য জনসচেতনতামূলক র‌্যালি  আয়োজন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। সারা দেশে 'গুজব' বিস্তার প্রতিরোধে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া সারা দেশে উন্মুক্ত স্থান ও সরকারি রাস্তার দুই পাশে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বমোট ১,৩৮,৪১০টি ফলজ ও ভেষজ গাছের চারা রোপণ করা হয়।

মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তার দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ বাহিনীর ক্রীড়াবিদরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণে অসামান্য কৃতিত্ব রেখে যাচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত এসএ গেমসেও দেশের হয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্রীড়াবিদরা ১৪২টি পদকের মধ্যে ৬৮টি পদক অর্জনের মাধ্যমে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। খেলাধুলার পাশাপাশি এ বাহিনীর সদস্য-সদস্যারা সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রোধ করে দেশীয় সংস্কৃতি লালনেও মূল্যবান অবদান রেখে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শরীফ কায়কোবাদ বলেন, নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখছে। এ বাহিনী হতে বিনামূল্যে আধুনিক পেশাভিত্তিক ও বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমাদের তৃণমূল সদস্যরা।

সদস্যদের স্বনির্ভর করতে রয়েছে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংক হতে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণ করে আমাদের সদস্যরা প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।

মহাপরিচালক বলেন, বাহিনীর সদস্য-সদস্যাদের পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের আন্তরিকতার ফলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী বেশ কিছু ক্ষেত্রে অসামান্য সফলতা অর্জন করেছে। সরকার বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন এ বাহিনীকে যোগ্য সম্মান এবং কাজের ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষা এবং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন প্রশংসনীয় অবদান রাখায় সরকার এ বাহিনীকে 'জাতীয় পতাকা'  প্রদান করেন।

এছাড়া ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এ বাহিনী 'স্বাধীনতা পদক' অর্জন করে। প্রতিবছর মুজিবনগর দিবসে 'গার্ড আব অনার' প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্তিও এ বাহিনীর বিশাল অর্জন। এর ফলে বাহিনীর সেবা প্রদানের মান ও গতি আরো বৃদ্ধি পাবে। জননিরাপত্তা, জনসেবা এবং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ বাহিনী আরো বিশাল পরিসরে অবদান রাখতে পারবে।

মহাপরিচালক জানান, কাজের ধারাবাহিকতা ও উন্নয়নের ফলে বাহিনীর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের পদের মানোন্নয়ন এবং উর্ধ্বতন পদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবছর বাহিনীর ছয়টি উপ-মহাপরিচালক এবং ১৭টি পরিচালক এর পদ সৃজন করা হয়েছে। বাহিনীর কর্মদক্ষতা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদবীর ১৪২৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পোশাক বিধিমালা ২০০৪ এর সংশোধনের আলোকে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপ-মহাপরিচালক হতে মহাপরিচালক পর্যন্ত সকলকে নতুন র‌্যাঙ্ক ব্যাজ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের সর্বনিম্ন তিনটি ধাপের পদবির বিপরীতে বেতন স্কেল বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতার উন্নয়নের কারণে অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় ১৮তম গ্রেডকে ১৭তম গ্রেড, ১৭তম গ্রেডকে ১৬তম গ্রেড এবং ১৬তম গ্রেডকে ১৫তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে।

মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ এক ছেলে এক মেয়ের পিতা। স্ত্রী গৃহিনী। নিজ জেলা মানিকগঞ্জ। 

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা