• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

প্রফেশনাল শব্দটা কোনভাবেই কমার্শিয়াল না : মম

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯  

মডেল ও অভিনেত্রীর বাইরেও জাকিয়া বারী মম একজন নৃত্যশিল্পী। শিশুশিল্পী হিসেবে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুড়ি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর মুকুট মাথায় নিয়ে শোবিজে পা রাখেন। এরপর ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, শুধু তাই নয় নিজের ঝুলিতে অর্জন করে নেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মডেলিং, নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র সব অঙ্গনেই নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন মুগ্ধতায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে কাজ, ব্যস্ততা ও সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেন এই লাক্সতারকা।

রোমান্টিক নাটক এখন বেশি দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় ঘুরেফিরে একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। এতে একঘেয়েমি মনে হয় না?

জাকিয়া বারী মম: দর্শকরা আমাকে রোমান্টিক চরিত্রে পছন্দ করে। সেদিক থেকে আমাকে তো অবশ্যই দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। কারণ আমরা তো দর্শকদের জন্যই কাজ করি। আমার এই ক্যারিয়ারে রোমান্টিক চরিত্রের বাইরেও আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রে ডাইভার্ট হয়ে কাজ করেছি। সামনেও ভার্সেটাইল চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছে ও প্রস্তুতি দুটোই আছে আমার। দর্শকের ইচ্ছাকে আমি অবশ্যই গুরুত্ব দেবো এবং সেটার পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রেও দর্শকরা আমাকে পছন্দ করেন, এজন্য আমার দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি।

আর রোমান্টিক চরিত্রে অনস্ক্রীণে কাজ করা, আমার মতে কমেডির পর সবচেয়ে কঠিন কাজ। বাস্তব জীবনে প্রেম-ভালোবাসা যেটা হয় সেটা অনস্ক্রীণে ফুটিয়ে তোলা আসলে সম্ভব না। কারণ যার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক, সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত। কিন্তু অনস্ক্রীণে যার সাথে প্রেম, সে তো আমার সহশিল্পী। তার সাথে তো আমার প্রেমের সম্পর্ক না। তাই সেখানে খুব সূক্ষ্মভাবে অভিনয়টা করতে হয়, নাহলে প্রেমটা স্ক্রীণে জমে না। সেটা অভিনয় মনে হয় তখন। প্রেমের অভিনয় করাটা আমার কাছে যথেষ্ঠ কঠিন মনে হয়।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে নাটকে কোন অভিনয়শিল্পী কান্না করলে সেটি হিট হয়ে যায়। ইমোশনাল বিষয়গুলো দর্শককে বেশি টাচ করে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

জাকিয়া বারী মম: বাঙালি বরাবরই খুব ইমোশনাল জাতি এবং কিছুটা হুজুগেও। যা চলতে থাকে তার একঘেয়েমি শেষ পর্যন্ত না পৌঁছানো অব্দি এর ফুলস্টপ দিতে জানে না। পরিণীতি বোধের বিষয়টা আমাদের জনজীবনেই আছে। সময়ের সাথে সাথে আবেগ-ভালোবাসা সবই পাল্টে যায়। সবই তো সময়, সময়ের ঊর্ধ্বে তো কিছু না।

অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নাটক। মূল সংকট কী আর এখন পর্যন্ত এর কতটুকু সমাধান করতে পেরেছি আমরা?

জাকিয়া বারী মম: দেখেন, বাংলাদেশের বয়স এখনও পঞ্চাশ হয় নি। একটা দেশের বয়স যেখানে এখনও পঞ্চাশ হয় নি, সেখানে তারপরও যে আমাদের এতকিছু আছে, যেই অবস্থায় আছি, যা করছি এতেই দমে দমে শুকরিয়া জানানো উচিত। প্রত্যকেদিনই যদি সবাই পরিবর্তন চায়, তাহলে তো পরিবর্তন আসবে না। আমি একটা যদি উদাহরণ দেই, দেখবেন প্রতিদিন বার্গার খেতে কারও ভালো লাগে না, অথচ ভাত কিন্তু প্রতিদিনই খেতে পারে সবাই। লাইফ ইস সো সিম্পল। সবকিছুই আসলে স্বাভাবিক, সহজ, ভাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, দায়িত্ববোধ এই সব বিষয় গুলোর মধ্যে থাকা উচিত। আমরা একটু একটু করে আগাই, এত লাফানোর তো কিছুই নেই। পৃথিবীর কোন দেশই বাংলাদেশের মত এত অল্প সময়ে এতটা উন্নতি করে নি। আমাদেরকেও অনেক কিছু বুঝতে হবে। আমরা কতটা যোগ্য হয়ে এসেছি এই যোগ্য ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য? আমার মনে প্রতিদিন এটা নিজেকে একবার প্রশ্ন করা উচিত। আয়নার সামনে তো আমরা প্রতিদিনই দাঁড়াই, কিন্তু প্রতিদিন কি আমারা নিজদেরকে তৈরি করি? করি না। নিজেকে তৈরি না করেই আমি চাইবো, অন্য কেউ এসে আমাকে কিছু দিয়ে যাবে! তাহলে তো হবে না। এটা কোথাও, কখনও হয়নি।

আর্ট মানে তো শিল্প। এটার জন্য তো সময় দিতে হবে। গঠনমূলক কিছু করতে হবে। এতে মেধা খাটাতে হয়, শ্রম দিতে হয়। প্রত্যেকদিন ইস্যুর মত করে তো আর আর্ট পরিবর্তন করা যায় না। সময়ই সবকিছু ঠিক করে দেয়। আমি নিজে যা ভাবছি, তা ঠিক কিনা সেটাও সময়ই বলে দেবে। আমি শুধু নিজেকে আমার কাজের জন্য তৈরি রাখতে চাই। আমি আমার নিজের মধ্যে কাজটাকে ভালোবেসে অনেক ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। শুধু তাই নয় এই ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যকেটা মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

টেলিভিশন চ্যানেল বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রোডাকশন বাড়ছে। প্রযোজনের খাতিরেই কিংবা অনুরোধে যেই গল্পটা এড়িয়ে যেতে পারতেন সেটাও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এমনটা কি হয় কাজের ক্ষেত্রে ?

জাকিয়া বারী মম: প্রফেশনাল শব্দটা কোনভাবেই কমার্শিয়াল না। প্রফেশনাল হচ্ছে এমন একটা শব্দ যেটার সাথে নিজের কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিজের প্রস্তুতি, চারপাশ, ইন্ডাস্ট্রি, দেশ সামগ্রিকভাবে সবকিছু ভালো থাকা, এটা প্রফেশনালিজম। আমি আমার প্রফেশনালিজমে আস্থা রাখি। অনুরোধ, সময়ের চাহিদা, সংখ্যা , অনেক তাড়াহুড়ো, অস্থিরতা বা কে কোনদিকে যাচ্ছে, কে হাজার মেইল বেগে দৌড়াচ্ছে! এগুলো আমি ভাবি না। আমি ওই রেসের মানুষ না। আমি আমার প্রফেশনের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল আর প্রফেশনাল শব্দটাই একটা দায়িত্ববোধ।

অনেক সময় দেখা যায়, আপনার অভিজ্ঞ অভিনয় ও ইমেজ দিয়ে একটা নরমাল গল্পের নাটকও উৎরে যাচ্ছে। এটাকে কী বলবেন?

জাকিয়া বারী মম: উৎরে যাওয়া শব্দটার সাথে আমি আসলে কমফোর্টেবল না। আসলে উৎরে যাওয়ার কিছু নেই। হয় ভালো, নয় খারাপ। আমি আমার কথা যদি বলি, গুড কিংবা বেস্ট না আমার চেষ্টা থাকে নিজের কাজকে 'এক্সিলেন্ট' এর দিকে নিয়ে যাওয়া। আমি আমার জীবনে সংখ্যাকে কখনও গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করিনি, কোয়ালিটিটা আমার কাছে খুব এবং খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ধীর গতিতেই এগিয়ে যেতে চাই, কোন তাড়াহুড়ো নেই। আমি সিঁড়িতে উঠতে চাই, লিফটে নয়।

নাটকের ভ্যারিয়েশন নিয়ে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেন। নাটকে ভ্যারিয়েশন আনাটা কী খুব কঠিন?

জাকিয়া বারী মম: ভ্যারিয়েশন কথাটা যে আসে, আমাদের দেশের মত এতবড় নাটকের ইন্ডাস্ট্রি আর কোথায় আছে? নেই তো। যেই নাটকের ইন্ডাস্ট্রিতে এত পরিমাণ টাকা লগ্নি হয়, এই লেবেলের প্রতিযোগীতা হয়, এই নাটকের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে দর্শকের এত পরিমাণ আগ্রহ এবং যে নাটকের ইন্ডাস্ট্রিতে এত জীবনধর্মী কাজ হয়, এত এক্সপেরিমেন্টাল কাজ হয়! আমার মনে হয় না বাংলাদেশের নাটক ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া আর কোথাও এমনটা হয়। পাশের দেশে যদি আমরা দেখি, সেখানে কিন্তু সিরিয়াল মানে শুধুই সিরিয়াল। সেখানে কিন্তু একক নাটক, টেলিছবি বা কমপ্লিট গল্প হচ্ছে না। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই প্রচুর কাজ হয়। প্রচুর কাজ যখন হয় তখন কিছু ভালো হবে, কিছু খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের বেশিরভাগ শিল্পীরই কিন্তু অভিনয় নিয়ে কোন স্কুলিং নেই। আমরা গুরুমুখী বিদ্যাটা শিখেছি। সিনিয়রদের থেকে, বই পড়ে, ইউটিউব দেখে, ইন্টারভিউ দেখে শিখছি, কাজ করছি। সেখানে তুমি কিছুই দিবা না, শুধু চাইবা এটা তো অন্যায়। একজন অভিনেতার কাছ থেকে সবাই সেরাটাই চায়। আমরা যে মিনিমাম লজিস্টিকের মধ্যে অভিনয় করি এবং সে অভিনয়কে দর্শকরা এত এপ্রিশিয়েট করে, বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোনও হয়তো এটা কল্পনাও করতে পারবে না। আমরা যেটা করছি সেটা আল্লাহ তায়ালার রহমত। তারা কখনও দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারবে না আমরা যেভাবে কাজ করি। আমি কাউকে ছোট করে বলছি না, ইন্ডাস্ট্রির পার্থক্যটা শুধু বলছি। তারা অনেক মেধাবী অভিনেতা-অভিনেত্রী কিন্তু আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, আমাদের দেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও কোন অংশে কম না। তা নাহলে এই সময়ে এই অবস্থায় ফাইট করে অভিনয়কে প্রফেশন হিসেবে নিয়ে চলা খুব সহজ কাজ নয়, নট অ্যা ম্যাটার অফ জোক।

বর্তমান শিল্পীদের জুটিরে বাইরে কাজ করতে খুব একটা দেখা যায় না। এতে করে একঘেয়েমি একটা বিষয় কাজ করে কী?

জাকিয়া বারী মম: একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই কথাগুলো আমার বলা বাঞ্ছনীয় মনে হয় না। এই কথাগুলো দর্শকদের বলার কথা। কারণ জুটি তৈরি করে দর্শক।

শোনা যায়, শিল্পীরাই এখন সহশিল্পী নির্ধারণে পরিচালকদের উপর প্রভাব খাটায়। এটা কতটুকু যুক্তিসম্পন্ন? পরিচালক তো গল্পে যাকে প্রয়োজন মনে করবে তাকেই নেবে?

জাকিয়া বারী মম: এমন হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। যার যার যুক্তি তার কাছেই। আমি মনে করি, আমার বলা না বলাই কিছু যায় আসে না। যদি এমন হয়ে থাকে সেটা সময়ই নির্ধারণ করে দেবে কোনটা ঠিক কোনটা ঠিক নয়। আমি শুধু আমার কাজটা নৈতিকতা অনুসারে করে যেতে চাই। আমার কাছে মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির ভালোর জন্য যেটা হবে সেটা ইন্ডাস্ট্রির সবার জন্যই ভালো হবে। দশ জন ভালো থাকলে ভালো বড় হয় কিন্তু পাঁচজন ভালো থাকলে সেটা বড় হয় না, কমে যায়।

এখন ইউটিউব চ্যানেলের জন্যও আলাদাভাবে নাটক নির্মাণ করা হচ্ছে। টেলিভিশন চ্যানেলের নাটকগুলোও ইউটিউবে দেওয়ার পর প্রচুর দর্শক পাচ্ছে। আপনার কী মনে হয় এমন দিন আসবে যখন দর্শক আর টেলিভিশনে নাটকই দেখবে না?

জাকিয়া বারী মম: যখন অনলাইন পোর্টাল আসলো তখন অনেকেই বলেছিল যে প্রিন্ট পত্রিকা আর চলবে না। আবার যখন হোম ডেলিভারি সিস্টেম চালু হলো তখন সবাই খুব ক্রেজি হয়ে গেছি। যখন তখন এটা সেটা অর্ডার করছি। একটু অন্যধরণের এক্সাইট্মেন্ট তৈরি হয়েছে, কিন্তু এরজন্য কি কখনও বাসায় ভাত রান্না বন্ধ হয়েছে? হয় নি তো।

টেলিভিশনের যে টিআরপি বক্স, সেগুলো যথেষ্ঠ পরিমাণে বসানো আছে কিনা আমার জানা নেই। ইউটিউবে কোন কন্টেন্ট কত ভিউ হল সেটা সবাই দেখতে পারছে কিন্তু টেলিভিশনে কোন নাটক কত মিলিয়ন ভিউ হলো সেটা ত কেউ দেখতে পারছে না। কারও কাছে এটার কোন জরিপ নেই। আর সেটা না থাকার কারণেই ইউটিউবের এই ভিউটা সবার কাছে খুবই মূখ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু টেলিভিশনের ভিউ দেখার তো কোন প্রপার সিস্টেম নেই। সেটা যেহেতু নেই তাহলে কোন মাপকাঠিতে আমরা বিচার করি যে টেলিভিশন থেকে ইউটিউব এগিয়ে? এটা তো অন্যায়। একটি ভালো বাজেটের কাজের সাথে অপেক্ষাকৃত কম বাজেটের কাজ তুলনা করা ঘোরতর অন্যায়। এই যে টিআরপি সিস্টেম সেটাই ঠিক করতে পারে নি, চোখের খাদে চলে গিয়েছে, কেউ জিনিসটা বুঝলোই না তার আগে ইউটিউব ভিউটা কাউন্ট হয়ে গেল। যেই নাটকটা টেলিভিশনে প্রচারের পর সেটা আবার ইউটিউবে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে প্রচুর ভিউ হচ্ছে। তার মানে টেলিভিশনে ভিউ হচ্ছে না! সেজন্য মাপকাঠিটাকে এক করতে হবে, তারপর মাপতে হবে। সিস্টেম যদি প্রপার না থাকে তাহলে আমাকে জাজমেন্ট করবে কি দিয়ে? দুজনকে একই বাজেট, একই সুযোগ সুবিধা দিয়ে তারপর দেখা উচিত কার ক্রিয়েটিভিটি কত! আজকে টিআরপি সিস্টেমটা নেই বলে আজ সবাই ইউটিউবের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সবার কাছে ভিজিয়েবল কিছু মনে হচ্ছে, ওয়াও নাম্বার দেখা যাচ্ছে, ভিউ দেখা যাচ্ছে। এই প্রসেসটাকে আমার অন্যায় মনে হয়। সবাই টেলিভিশন চ্যানেলকে এখন অবজ্ঞা করে যাচ্ছে আর টেলিভিশন চ্যানেলও এখন অনেকটা দায়হীন হয়ে পড়েছে। দায়িত্বহীনতা একটা অনেক বড় অন্যায়।

নাটকে গল্পের মান অনেকক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেদের দায়বদ্ধতা কতটুকু মনে করেন?

জাকিয়া বারী মম: আসলে নাটকের মান মাপার কি কোন যন্ত্র আছে যে এটা দিয়ে মাপতে পারব কোন নাটকটি মানসম্পন্ন কোনটি মানহীন? সবার সবকিছু ভালো লাগবে এমন কোন কথা নেই। কারও ভালো লাগবে, কারও খারাপ লাগবে। কিংবা সবসময় যে ভালো লাগার মত কিছু করতে পেরেছি তাও তো না। আমাদের দেশের বয়স চল্লিশ বছর, আর আমাদের প্যাকেজ নাটকের বয়স ২৫ যেটা আমাদের সিনিয়রারা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। অভিনয় তো আর শুধু শারীরিকভাবেই হয় না, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক বিষয় সহ আরও অনেক বিষয় জড়িত। আমি দায়িত্ব নিয়ে আমার কাজটা ঠিকমত করে যেতে চাই। অনেক দূর যেতে হবে। অভিনেতা শব্দটার অনেক ওজন। এত ওজনের এই শব্দটা যেন নিজে নামের আগে যোগ্যভাবে বসাতে পারি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। এখনও কিছুই করি নি, অনেক কিছুই করার বাকি। কিছু না করতে আমাকে যে এত মানুষ ভালোবাসে সেটা ভেবেই আমি অবাক হই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ইউটিউবের কমেন্ট বক্সে দর্শকের অভিযোগ দেখা যায় দিন দিন নাটক থেকে পারিবারিক আবহ, পারিবারিক সদস্যদের আবেগ-অনুভূতি কমে যাচ্ছে। এখন পরিবার বলতে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী বড়জোর একটা ভাইবোন বা শিশু। নায়ক-নায়িকার বাইরে তাদের চরিত্রের গুরুত্বও কম। যার ফলে নাটক সাময়িকভাবে হিট হলেও টিকে থাকছে না। আপনি কী তা মনে করেন?

জাকিয়া বারী মম: আমরা একটা সময় যৌথ পরিবারে বসবাস করেছি, এরপর নিউক্লিয়ার পরিবার হয়ে গিয়েছি তারপর একক। আমরা বাস্তব জীবনে যেটা যাপন করি সেটাই কিন্তু এখন নাটকে আসে। সেরকমই একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা। পিরিয়ডিক্যাল বা ইজম ছাড়া আমরা যে কাজগুলো করি সেটার বেশিরভাগই কিন্তু বাস্তব জীবন, সাধারণ কিংবা নিত্যদিন থেকেই আসে।

নতুন একটি ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছেন। ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাই...

জাকিয়া বারী মম: একটি কমেডি ঘরানার ছবি। কমেডি ঘরানার কাজ আমার খুব কম করা হয়েছে। সব জনরার কাজই করা হয়েছে আমার। এই জন্যই কাজটাতে যুক্ত হওয়া। আমি চেষ্টা করেছি সবসময় নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার। একইভাবে দর্শকদের সামনে বারবার হাজির হলে দর্শকরা হতাশ হন। বাংলাদেশ জার্নাল: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। কোন চিন্তাটা আপনাকে সবসময় সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়?

জাকিয়া বারী মম: আমার মা যেভাবে আমাকে ছোটবেলা থেকে বড় কর তুলেছে, মেয়ে বা ছেলে এই ধরণের কোন ইন্ডিকেশন আমার মা আমাকে দেয় নি। আমাকে স্বাধীনভাবে বড় করেছে, যে স্বাধীনতায় স্বচ্ছতা, ক্রিয়েটিভিটি, শিক্ষা সামর্থ্য অনুযায়ী। আমি কখনও এমন কিছুই করতে চাই না যেটা আমার বাবা-মাকে আঘাত করবে। এই চিন্তাটা আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমার মা আমাকে সবসময় বলে 'ডোন্ট গিভ আপ'। আই এম অ্যা ফাইটার, আই উইল ফাইট ফর মাই পিসফুল লাইফ।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা