• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করছে ফারজানা

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২০  

পড়তে ভালোবাসতো চৌদ্দ কি পনেরো বছরের কিশোরটি। গল্পের বই বলেন আর ক্লাসের পড়ার বই বলেন এমনকি বাদামের ঠোঙ্গাও না। ঘন্টাব্যাপী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ত প্রতিদিনের সংবাদপত্রও। প্রতিদিনকার খবর আর পিছিয়ে পড়াব বা অবহেলিত মানুষ গুলোর খবর মনে নাড়া দিতো তাঁর। সেই থেকেই এমন মানুষ গুলোর পাশে দাড়ানোর  ইচ্ছে  বুনতে থাকে মনে।

কিশোরটি এখন কেবল ত্রিশ পেরিয়েছে। বলছি ফারজানা হুসাইনের কথা! পরিবার আর কাছের বন্ধুদের কাছে সে পরিচিত সুমনা নামে। জন্ম আর বেড়ে ওঠা খুলনাতে। আইনজীবী বাবার সান্নিধ্যে  বড় হয়ে আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখে এস এস সি আর এইচ এস সি তে মেধাতালিকায় নাম লেখায় ফারজানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে আইন বিভাগে শুরু হয় তার পদচারণা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সুযোগ আসে দেশের বাইরে পড়াশুনার। তাই সতেরো বছরের মেয়েটি দুচোখে অজস্র স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমায় যুক্তরাজ্যে, নর্দাম্রিয়া ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে। গ্রাজুয়েশন শেষে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা করে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে, সাফল্যের সাথে উত্তীর্ন হয় বার-এট-ল ডিগ্রী। পোস্ট গ্রাজুয়েশন-এর প্রস্তুুতি চলছে, তখন সবাই তাকে পরামর্শ দেয় কর্পোরেট আইন এ মাস্টার্স করার জন্য, তাতে আছে মোটা মাইনের কর্পোরেট জব আর ধনী ক্লায়েন্ট। কিন্তু ফারজানা নিজের পছন্দে বেছে নেয় মাস্টার্সের সাবজেক্টঃ আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার আইন। যেন জীবনানন্দের ভাষায়, অর্থ নয়, বিত্ত নয়, কোন এক বিপন্ন বিস্ময় খেলা করে ওর রক্তের ভিতরে।

বাবার পাশাপাশি রত্নগর্ভা শিক্ষিকা মায়ের অনুপ্রেরণায় ফারজানা আজ ঘুনে ধরা সমাজটায় পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছে।

 

ফারজানা কাজ করছে পাবলিক সার্ভিসে, বৃটিশ গভর্নমেন্ট এর অধীনে। কাজের চাপে ব্যতিব্যস্ত তার দিন-রাত, আর চলছে লেখালেখি। ইংরেজি, বাংলা সংবাদপত্র থেকে শুরু করে ব্লগ সব প্লাটফর্মেই লেখে ফারজানা। কোন পরিচয়ে সবচেয়ে সাবলীল? আইনজীবী, সরকারি চাকুরে, কলামিস্ট, রাইটস একটিভিস্ট, নাকি ব্লগার ? এ প্রশ্নের জবাবে ফারজানার অকুণ্ঠ উচ্চরণ- আমি আপদমস্তক লেখক তা সে যে প্লাটফর্মেই হোক। বাদবাকি সব জীবন-জীবিকার তাগিদ আর লেখালেখির প্রেরণা। ২০১৪ থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলা ও ইংরেজিতে কলাম লিখে চলেছে ফারজানা একটানা। গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতা নয়, বরং ফারজানার লেখার বিষয় মানুষ আর মানুষের অধিকার। ফারজানা লেখে ভ্রমণ কাহিনী ও। কিছুই লেখার না থাকলে ফেসবুকে লেখেন ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের দিনপঞ্জিকা।  মানুষ হল তাঁর লেখার বিষয়, তাই সেই মানুষের তালিকা থেকে বাদ যায় না কেউ- নারীর প্রতি সহিংসতা, শিশুর প্রতি করা যৌননির্যাতন, ধর্ষণ, সামাজিক ট্যাবু, এলজিবিটি অধিকার, তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফারজানা লিখে চলেছে নিরন্তর। দিন শেষে প্রাপ্তি কতখানি? জিজ্ঞেস করলে ফারজানা বলেন, আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ ! কখনও সাধুবাদ তো কখনও তিরস্কার, এমনকি ভয়ভীতি - এ সবকিছুই লেখক জীবনের প্রাপ্তি হিসাবে দেখেন ফারজানা।

মাঝে মাঝে আসে অবসাদ, আসে সংশয়। দিন বদলের খেলা তো সময়সাপেক্ষ বিষয়। নরপিশাচের আনাগোনা সর্বত্র। ওরা ভয় দেখায়, কণ্ঠ রুখতে চায়, এমনকি ছিনিয়ে নিতে চায় মত প্রকাশের অধিকার। কিন্তু তাই বলে থেমে গেলে তো চলবে না। যে অল্প কিছু মানুষ তাদের লেখায় উচ্চরণ করছে নতুন দিনের জয়গান, যে গুটিকয়েক এক্টি ভিস্ট আজ হাল ধরছে এ প্রজন্মের, তাদেরকে লিখে যেতে হবে দিনের পর দিন, কাজ করে যেত হবে ফলাফলের চিন্তা না করে। বিশ্বাস রাখতে হবে আগামীদিনে।

তথ্য সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা