• শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৮ ১৪৩১

  • || ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজকের খুলনা

আমার বুকটা যে খালি করেছে, সে শান্তি পাবে না’

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২৪  

‘বাবা আমার জন্য মুরগি আনবা তখন সুমন বলেছিল ডিউটি শেষ করে মুরগি নিয়ে আসবো। কিন্তু ডিউটি শেষ করে সুমন ঘরামী এলেন নিথর দেহের লাশ হয়ে।

বাচ্চার জন্য মুরগি আনা হলো না তার’।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে খুলনা পুলিশ লাইনে নিহত সুমন ঘরামীর স্ত্রী মিতু বিশ্বাস বিলাপ করে এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, সে পালাইছিল। তাকে যারা দেখাই দিছে এখানে পালাইছে তার জীবনে কোনো শান্তি হবে না। আমার বুকটা যে খালি করেছে। সে শান্তি পাবে না।

গার্ড অব অনার শেষে নিহত সুমনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় সুমনের স্ত্রী, বাবা, মা, ভাই ও পরিবারের সদস্যদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

নিহত সুমনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস আহাজারি করতে থাকেন। পুলিশ কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন যাকেই পাচ্ছেন তাকে জড়িয়ে ধরে স্বামী হত্যার বিচার দাবি জানান। তার বুকফাটা আর্তনাদ দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি আত্মীয়-স্বজন ও পুলিশ সদস্যরা। বাবার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে অবুঝ ছয় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে স্নিগ্ধা। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই উপস্থিত কারও।

পুলিশ লাইনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুমন ঘরামীর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়ায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খুলনায় পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষ চলাকালে মহানগরের গল্লামারী এলাকায় শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় পুলিশ কনস্টেবল সুমনকে বেধড়ক মারধর করেন বিক্ষোভকারীরা। সুমনের আঘাতের তীব্রতা এত ছিল যে, তার মাথায় ইন্টারনাল ইনজুরি হয়, তার মাথার খুলি ভেঙে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন তিন দফা সংঘর্ষে পুলিশ, পথচারী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনন্ত ৫০ জন আহত হয়েছেন। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন।

সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সুমন এবং আমি একসঙ্গে ছিলাম। সংঘর্ষের একপর্যায়ে দলছুট হয়ে যাই। ইউনিফর্ম খুলে আমি প্রায় চার ঘণ্টা ড্রেনের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যে আন্দোলনকারীরা এ সময় কনস্টেবল সুমনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।

নিহত পুলিশ সদস্য সুমন ঘরামীর বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়ায় উপজেলায়। সুমন উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কিসমত মালিপাটন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শুশীল ঘরামীর ছেলে। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন খুলনা মহানগরের বয়রা এলাকায়।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শুশীল ঘরামী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

মা গীতা রানি ও স্ত্রী মিতু বিশ্বাস পাগলপ্রায়। তাদের মেয়ে স্নিগ্ধা বারবার খুঁজছে বাবাকে।

নিহত সুমনের গার্ড অব অনার শেষে কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, নিহতের সুমনের পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং মরদেহ সৎকারে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে আট লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। কেএমপি আজীবন পরিবারটির পাশে থাকবে। সুমনের পরিবারে কেউ শিক্ষিত পুলিশে চাকরির উপযোগী কেউ থাকলে তাকে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

আজকের খুলনা