• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

খুলনার আলোচিত অনুপ দাশ হত্যা মামলার সকল আসা‌মি খালাস

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১  

নগরীর দৌলতপুর থানাধীন পাবলা কেশবলাল রোডে আলোচিত অনুপ দাশ হত্যা মামলায় সকল আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৮) অক্টোবর খুলনা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: সাইফুজ্জামান হিরো এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে এ হত্যাকান্ডের সুনি‌র্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় আদালত এ রায় ঘোষণা দেন।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, দেয়ানা পূর্বপাড়ার মো: সোবহান শেখের ছেলে রিপন ওরফে এ্যালকো রিপন, ও একই এলাকার মো: বাবর আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম ওরফে কাম, পাবলা হুজি বাড়ির মো: জামাল হুজির ছেলে ও শহিদ হুজির ভাইপো মো: পাপ্পু, দেয়ানা পূর্বপাড়া হিমুর বাড়ির ভাড়াটিয়া মো: দুলাল মোল্লার মো: রায়হান মোল্লা, ও একই এলাকার বাউন্ডারী রোড চুনুর বটতলার এসকেন শেখের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রকি, দেয়ানা পূর্বপাড়ার মৃত মোদাচ্ছের আলী ওরফে মধুর ছেলে শেখ মিজানুর রহমান মিজা, খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার শাহাবুদ্দিন গাজীর ছেলে সোহাগ গাজী, দেয়ানা মোল্লাপাড়ার বাবু মোল্লার বাড়ির পাশে মো: মঈন মোল্লার ছেলে সবুজ ওরফে ডুবার, দেয়ানা পূর্বপাড়ার নজরুল ইসলামের বাড়ির কেয়ারটেকার হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অনুপ দাশ পাবলা তিন দোকানের মোড় কাহারপাড়ার সাধন চন্দ্র দাসের ছেলে। ২০১৭ সালের ২০ মে বিকেল ৫ টার দিকে দৌলতপুর বাজারের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজে না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে নিহতের পিতা লোকজন মারফতে জানতে পারে দৌলতপুর থানাধীন পাবলা কেশবলাল রোডের জনৈক প্রফেসর আব্দুর রশিদের বাড়ির সামনে অনুপের ক্ষত বিক্ষত লাশ পড়ে রয়েছে। সেখানে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন নিহতের পিতা। এ ব্যাপারে তিনি ২১ মে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন, যার নং ২০।

এরপর মামলাটি ওই থানায় আলোচিত হলে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। অনুপ দাশ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের কাছ থেকে তেমন ক্লু বের করতে পারেনি। পরে পুলিশ দেয়ানা মোল্লাপাড়া থেকে মো: সবুজ ওরফে ডুবারকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তথ্য জানতে তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করলে তাকে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুুর করেন। রিমান্ডে জিঞ্জাসাবাদে আসামি ডুবার হত্যাকান্ডের বিবরণ দেয়। বিবরণে আসামি ডুবার জানায়, হত্যাকন্ডের তিন মাস পূর্বে সাথে তুফান, হাবিব, রকি ও পাপ্পুর সাথে অনুপের বিরোধ দেখা দেয়। এরপর থেকে সবুজসহ উল্লেখিতরা মিলে ভিকটিমকে মারার পরিকল্পনা করতে থাকে।

হত্যাকান্ডের দিন রাতে সবুজ ইজিবাইক চালিয়ে পাপ্পু, তুফান, রকি ও হাবিবকে সাথে নিয়ে স্থানীয় কালি মন্দিরের সামনে এসে অনুপকে তুলে নেয়। এর আগে পাপ্পু গাড়ির সিটের নীচে একটি শর্টগান রেখে দেয়। অনুপকে ইজিবাইকে ওঠানোর পর তারা হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর গাড়িটি পর্দা দিয়ে ঢেকে ফেলে আসামিরা। কুন্ডুপাড়া গলির মধ্যে একটি স্কুলের পাশে নামিয়ে আসামিরা অনুপকে ধরে রাখে, এরপর পাপ্পু গাড়ি থেকে শর্টগান বের করে গুলি করে। যা আসামি সবুজ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন। এরপর মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ মোশারেফ হোসেন আসামিদের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার অপর আসামি তুফান শেখ ওরফে ড্যান্ডি তুফান ওরফে মেহেদী হাসান তুষার কিশোর হওয়ার তার বিচারিক কার্যক্রম শিশু আদালতে রয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাত্যার কারণ হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, অনুপ দাস মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত। মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মিজান ওরফে মির্জার নেতৃত্বে এ হত্যার পরিকল্পনা করে আসামিরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে হত্যাকান্ডের দিন কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরিফ মাহমুদ লিটন জানান, বাদী পক্ষ স্বাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। তাছাড়া মামলাটি প্রথম থেকেই প্রশ্নবোধক থাকায় আদালত এ রায় দিয়েছে।

অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ তৌফিক উল্লাহ জানান, আসামি সবুজ ওরফে ডুবার এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্রের শিকার। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে জোর পূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ অন্যদের এ মামলায় আসামি করে হয়রানি করেছে। তাছাড়া যে ইজিবাইকে করে ভিকটিমকে হত্যা করা হয়েছে সে বহনটি রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত করতে পারেনি। আদালতের রায়ে তিনি খুব খুশি। রায় ঘোষণা শেষে আসামিরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা