• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

বিচারক-আইনজীবী দম্পতির গল্প

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯  

অ্যাডভোকেট নিগার সুলতানা। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনের পরিচিত মুখ। উচ্চ আদালতে আইন পেশায় ভাল করার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সুনাম কুড়িয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, ডানপিটে ও চঞ্চল স্বভাবের নিগার সুলতানা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় পরপর দুইবার প্রথম রার্নাস আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। নারীদেরকে জাগিয়ে তোলার লক্ষে নাটকে প্রতিবাদী নারী চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। ভালোবেসে বিয়ে করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী সৈয়দ তফাজ্জল হাসান হিরুকে, যিনি একজন বিচারক। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে জুডিশিয়ারিতে কর্মরত। বিচারক স্বামীকে পাশে রেখে আইন পেশায় অনেক দূর যেতে চান নিগার সুলতানা। রাজনীতিতেও নামতে চান চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা এই নারী আইনজীবী।

হাসি-খুশি আনন্দে কাটানো ছোটবেলা, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন দিনগুলো, দুজনের পরিচয় ও বিয়ে, আইন পেশা নিয়ে স্বপ্ন ও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন অ্যাডভোকেট নিগার সুলতানা। আইন পেশায় ভাল করতে নবাগতদের পরামর্শ দিয়েছেন তার বিচারক স্বামী সৈয়দ তফাজ্জল হোসেন হিরু। 

পারিবারিক পরিচয়,  শৈশব, কৈশোরের দিনগুলো ...


নিগার সুলতানা: বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। জন্ম  চট্টগ্রামে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে পতেঙ্গার সরকারি কোয়ার্টারে। আমার শৈশব ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। মাঠে ব্যাডমিন্টন, গোল্লাছুট, কানামাছি, ভলিবল খেলেছি আবার দোলনায় দুলেছি। পরীক্ষা শেষ হলে সেই রাত এবং পিকনিকের সেই আনন্দ আজও আমাকে শিহরিত করে। ছোট বেলা থেকেই একটু চঞ্চল ও ডানপিঠে থাকার কারণে কলোনীর সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলাম আমি। আমার স্কুল কলেজের শিক্ষকরা খুব ভালোবাসতেন। তাদেরকে খুব মিস করি।

আমরা দুই বোন ও দুই ভাই। আমার বড় বোন নাহিদ সুলতানা এডমিন ক্যাডারে আছেন। তিনি পিএসসিতে সিনিয়র সহকারী সচিব। এখন তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত। তার স্বামী ফখরুল ইসলাম ক্রেডিট ম্যানেজার হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে কর্মরত। ভাই হাবিব শাকিল নাট্য পরিচালক এবং তার স্ত্রী আনুশা তাজরী বুয়েট থেকে বের হয়ে বর্তমানে সরকারি প্রজেক্টে কর্মরত। সবার ছোট ভাই শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। আমার মা নারগিস সুলতানা, স্বাধীনচেতা মানুষ। আমাদের চার ভাই-বোনকে গড়ে তোলার মূল কারিগর আমার মা।

আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন।


নিগার সুলতানা : আমার স্কুল হচ্ছে ইস্টার্ন রিফাইনারি মডেল হাইস্কুল। ২০০১ সালে এসএসসি এবং ২০০৩ সালে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করি। এরপর চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে এলএলবি অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ২০০৯ সালে বের হই। ২০০৯ সালে জজ কোর্টে এনরোলমেন্ট হয় এবং ২০১৩ সালে হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট হওয়ার পর থেকে প্র্যাকটিসে আছি।

আপনার বিচারক স্বামীর বিষয়ে জানতে চাই..


নিগার সুলতানা: নাম সৈয়দ তফাজ্জল হাসান হিরু। জন্ম কক্সবাজারের চকোরিয়ায়। কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ২০০১ সালে এইচ এস সি পাস করে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে এলএলবিতে ভর্তি হন। হিরু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিল। ২০০৭ সালে অর্নাস পাস করার সাথে সাথেই জুডিসিয়ারিতে নিয়োগ পান। এখন যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আইন বিষয় বেছে নেওয়ার কারণটা যদি বলতেন ...


নিগার সুলতানা: আমার বাবা কমরেড সুলতান আহমেদ বাম রাজনীতি করতেন। চট্টগ্রামের সাম্যবাদী দলের আহ্বায়ক ছিলেন। বাবা একজন স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। সে কারণেই ভিন্ন এক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছি। গান, বাজনা, আর্টসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতি পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের বেড়ে ওঠা এবং ভিন্ন কিছু করার মানসিকতা সবসময়ই ছিলো। কখনো গতানুগতিক চিন্তা আমাকে আকৃষ্ট করেনি। ছোটবেলা থেকেই আইন পেশা স্বাধীন ও চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে। এ কারণেই বেছে নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনিরুল আজম স্যারসহ অন্য শিক্ষকরা আমাদেরকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন। দক্ষ আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকরা অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের মনে স্বপ্নের বীজ বপন করেছেন।

পরিচয়, প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে...


নিগার সুলতানা: আমি একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। শিক্ষক, জুনিয়র, সিনিয়র সব মহলে আমি ছিলাম সুপরিচিত। ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। পড়াশুনা, আড্ডা সব কিছুর কেন্দ্র ছিল লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরিতেই হিরুর সাথে প্রথম দেখা। ইউনিভার্সিটিতে হিরু মেধাবী ছাত্র হিসেবে খুব সমাদৃত ছিল। খুব চুপচাপ স্বভাবের, লেখাপড়া ছাড়া কিছুই বোঝে না। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় দেখতাম আমাদেও প্রিয় শিক্ষক মনিরুল আজম স্যার হিরুর প্রশংসা করছেন, অন্য সকলেই তার প্রশংসা করছে । এর মাঝে  ২০০৫ সালে কক্সবাজারে ইউনিভার্সিটি থেকে একটা পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানে গিয়ে হিরুকে আরো চেনা জানার সুযোগ হয়। এভাবে চলতে চলতে আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে ফেলি। কিন্তু সবাই বলে, রিলেশনের একটা ফার্স্ট ডে থাকে। তবে আমি বলব, আমাদের দুজনের এমন কোন ডে নেই। একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি ও একসঙ্গে চলতে চলতে দুজন দুজনের কাছে মনে হয়েছে আমরা দুজন এক হয়ে সামনে এগুতে পারি। আমাদের পরিবারের সকলেই বন্ধুসুলভ। হিরুর বিষয় বাবা-মা আগেই জানতো। আব্বু রাজি হলেন। আর ওদিকে হিরুদের পরিবার থেকেও আমাকে পছন্দ করলেন। পরে পারিবারিকভাবেই ২০০৯ সালে আমাদের বিয়ে হয়।

আইন পেশার শুরু সম্পর্কে বলুন ...।


নিগার সুলতানা: আমার অপশন ছিলো দুটো। হয় জুডিশিয়ারি অথবা  হাইকোর্টে প্রাকটিস। এর মধ্য থেকে যে কোন একটি বেছে নেব। তবে আমার বাবা-মা চাইতেন যে আমি যেন কোর্টে প্রাকটিস করি। এরপর  হাইকোর্টে এসে এনরোলমেন্ট হওয়ার আগে কয়েকদিন প্রাকটিস করি। পরে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট হওয়ার পর ড. আলী স্যারের চেম্বারে জয়েন করি। প্র্যাকটিসের শুরুতেই ডিউটি ছিলো স্যারের কাজগুলো ভালো করে দেখা। তিনি যেভাবে কাজ করেন তা শেখার টার্গেটই ছিলো প্রথম। আমি শুরু থেকেই হাইকার্টে প্র্যাকটিস করছি। প্র্যাকটিস জীবনের শুরু থেকেই আমার কাজগুলো নিজের হাতে করেছি।

মামলার শুনানিতে গিয়ে ঘটে যাওয়া মজার কোন স্মৃতি বলুন ...।


নিগার সুলতানা: প্র্যাকটিসের বয়স তখন দুই তিন মাস। একদিন বিচারপতি সালমা মাসুদের কোর্টে স্যারের একটা মামলার মোশন ছিলো। ওই মামলায় আমি গেলাম সিনিয়র আইনজীবীর পক্ষে সময় চাইতে। আদালত মামলাটি আমাকেই তখনই শুনানি করতে বললেন। আমি কিন্তু তখন ঘাবড়ে যাইনি। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে শুনানি শুরু করেছিলাম। এক পর্যায়ে বেঞ্চের বিচারপতি হাবিবুল গণি স্যার তার চেয়ারে বসেই জোড়ে জোড়ে বলছিলেন- ভেরি গুড, ভেরি গুড। আমি তো তখন আনন্দে কাঁপছিলাম। এমনকি শব্দগুলো এখনও আমার কানে প্রতিধ্বনিত হয়। সেদিন কোর্ট রুমে অ্যাডভোকেট  আব্দুল মতিন খসরু স্যারসহ অনেক আইনজীবী ছিলেন। খসরু স্যার বের হয়ে বললেন, প্র্যাকটিসে তুমি অনেক ভাল করতে পারবে। এ অভিজ্ঞতার কথা আমি কখনোই ভুলবো না।

আরেকটি ঘটনার কথা বলতেই হয়। ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার স্যারের বিপরীতে একটা সিভিল মামলার শুনানি করছিলাম অনেক দিন ধরে। যেদিন জাজমেন্ট দেবে ওই দিন স্যার ওপেন কোর্টে আমার সুনাম করেছিলেন এবং কোর্ট থেকে বের হয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন তুমি সিভিল প্র্যাকটিস ছেড়ো না। তুমি ভাল করতে পারবে। স্যারের সেদিনের কথা আমাকে প্রেরণা যোগায়।’


আপনি তো খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সে বিষয়ে বলুন ?


নিগার সুলতানা: সুপ্রিম কোর্টে বৃহত্তর চট্টগ্রাম আইনজীবী কল্যাণ সমিতির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি ব্যাডমিন্টন, বিলিয়ার্ড, টেবিল টেনিস খেলার সঙ্গেও যুক্ত আছি। খেলাধুলার প্রতি পরিবারের সকলের আগ্রহ থাকার প্রধান কারণ ছিলেন আমার বাবা। তিনি সবসময় খেলাধুলা করতেন। চাকুরী জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি দাবা খেলতেন। সব খেলাতেই বাবা প্রথম হতেন এবং বাবাকে হারানো খুব কঠিন বিষয় ছিলো। কোর্টে বিভিন্ন মৌসুমের খেলায় কখনো বিলিয়ার্ড খেলছি, কখনো ব্যাডমিন্টন খেলছি। এগুলো আমার মনে তৃপ্তি যোগায়। আমি ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় পর পর দুইবার প্রথম রানার আপ হয়েছি। আমার ব্যাডমিন্টন ও বিলিয়ার্ড খেলা দেখে সকলেই প্রশংসা করে।

নাটকে অভিনয়ের বিষয়ে জানতে চাই ...।


নিগার সুলতানা: ২০০৫ সালে চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান লেটস মুভ প্রতিযোগিতায় আমি ফাইনাল রাউন্ডে যাই। এরপর ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে টিভি উপস্থাপিকা ফারজানা ব্রাউনিয়া, নাট্য অভিনেতা সহিদুজ্জামান সাচ্চু ভাই ও তার স্ত্রী কণা আপাদের সংস্পর্শে এলাম। তারা আমাকে দিয়ে একটি নাটক বানাতে চাইলেন। কিন্তু নাটকের কোন অভিজ্ঞতা আমার ছিলো না। তবুও আমার সাহস ছিলো। নাটকটির বিপরীতে অপূর্ব অভিনয় করেছিলো। নাটকের নাম ছিলো ‘কাহন’। নাটকটিতে একটি  প্রতিবাদী নারী চরিত্র ছিলো। চরিত্রটির নাম ছিলো ‘শিখা’।  সমাজের নারীদের জাগিয়ে তোলা তার কাজ। ওই চরিত্রের জন্যই আমাকে নাটকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। এরপর আমি নাটকটি করলাম। নাটক করার পরে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন যেমন গ্রামীণফোন বা ইস্পাহানী থেকে অফার আসে। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে আমি দেখলাম শ্যুটিংয়ের জন্য আজকে আমাকে এখানে কাল ওখানে থাকতে হয়। এতে আমার পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শ্যুটিং আর আমাকে টানেনি। সেমিস্টার ফাইনাল থাকার কারণে আমি চট্টগ্রাম ফিরে গেলাম। পরে অভিনয়টা আমাকে আর আকর্ষণ করেনি। আমার মনে হয়েছিলো পড়াশোনাটাই আমার আসল।

আপনাদের একজন বিচারক অন্যজন আইনজীবী। কেমন লাগে, কিভাবে সংসারে ব্যালেন্স করেন ?


নিগার সুলতানা: অবশ্যই ভাল লাগে। আমরা দুইজন যখন একসঙ্গে হই তখন ভুলে যাই কে বিচারক বা কে আইনজীবী। তবে আমরা যার যার কাজ সম্পর্কে বা গুরুত্বপূর্ণ মামলা-মোকাদ্দমা সম্পর্কে আলোচনা করি। আমরা দুজনই দুজনের পেশা সম্পর্কে খুব সচেতন। আমি সব সময় সতর্ক থাকি আমার কাজের জন্য যেন জজ সাহেবকে বিব্রত হতে না হয়। পেশা জীবনে আমরা অনেক কিছু মেনে চললেও ব্যক্তি জীবনে আমরা হাসি-খুশি ও আনন্দ প্রিয়। আমরা স্বামী স্ত্রী হলেও আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। আমরা সেই সম্পর্কে আটকে আছি যেটা ফেলে এসেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। এ কারণে সংসার জীবনে ১০টি বসন্ত চলে যাওয়ার পরও মনে হয় যে, সংসারে এতটা দিন কিভাবে কেটে গেলো! আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি দুজন মিলে বহুপথ পাড়ি দেওয়া কোন কঠিন ব্যাপার নয়। কারণ, একজনের বিপদে আরেকজনের হাতটা তো বাড়ানোই থাকে।

আইন পেশায় কোন সিনিয়র আইনজীবীকে অনুসরণ করেন ? কার সাবমিশন ভাল লাগে?


নিগার সুলতানা: মামলা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নিয়ে প্রপার স্টাডি করে যারা কোর্টে যান তাদের সবার শুনানি আমার পছন্দ হয়। একটা ঘটনা বলি, একদিন কোন এক কোর্টে গিয়ে দেখি একজন লইয়ার সুন্দর সাবমিশন রাখছেন। কোর্টে উপস্থিত সবাই নিরব, মনোযোগ দিয়ে তার সাবমিশন শুনছেন। আমার কাছে অসাধারণ লাগলো। তবে ওই দিন তার নাম জানতে পারিনি। চেহারাটা মনে রেখেছিলাম। তবে সেই আইনজীবীর পরিবার নিয়ে আপনার লেখা স্টোরি থেকে জানতে পারি তার পরিচয়। তিনি হলেন, ব্যারিস্টার জুনায়েদ চৌধুরী ভাইয়া।

সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন স্যারের সাবমিশন ভাল লাগে। তিনি অনেক হেল্পফুল। স্যারের মুখে সব সময় সুন্দর হাসি লেগে থাকে। হি ইজ রিয়েলি নাইস।’

এছাড়া সিভিল মামলায় আমার পছন্দের তালিকায় কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী স্যার, প্রবীর নিয়োগী স্যার, ব্যারিস্টার আহসানুল করীমের শুনানিও ভালো লাগে।

অবসর সময় কাটে যেভাবে ...।


নিগার সুলতানা: প্র্যাকটিসের কারণে কোর্টে ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে যখনই সময় পাই ঘুরতে বের হই, সেটা দেশে বা দেশের বাইরে।

তাছাড়া আমরা বেশ গল্পবাজ। দুজনে সারাদিন গল্প করতে করতে, হাঁটতে হাঁটতে হয়তো নিউ মার্কেট গেলাম আবার সেখান থেকে হয়তো বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম। এরপর সেখানে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিলাম, খেলাম এবং গল্প করলাম। এর মানে হলো, আমাদের জীবনটা এখনও যেন ইউনিভার্সিটি লাইফের মতই রয়ে গেছে। প্রতিটি দিন আমার কাছে নতুন ও আনন্দের মনে হয়।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই ...।


নিগার সুলতানা: আইন পেশায় এসেছি। এই পেশায় ভাল করতে দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনাসহ নিজেকে প্রস্তুত করতে যা যা করা দরকার তা করবো। নিজেকে একজন পূর্ণ আইনজীবী হিসেবে তুলে ধরতে চাই। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে আমি একজন ভালো আইনজীবী হবো। আমি সবার কাছে ভালো আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আমার বাবা সরকারি চাকুরি করলেও তিনি মূলত রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আমাকে বলতেন, শুধু কোর্টে প্র্যাকটিসের জন্য গেলেই হবে না, রাজনীতিও করতে হবে। তাই রাজনীতিতে নামার ইচ্ছে রয়েছে।

আইন পেশায় নবাগতদের জন্য পরামর্শ ...।


সৈয়দ তফাজ্জল হাসান হিরু: পড়াশোনা তো আছেই। পড়াশোনার বিকল্প নেই। তাছাড়া অ্যাডভোকেসি হচ্ছে একটি শিল্প। এই শিল্পটাকে শিল্পী যেভাবে রাঙায় সেভাবে রাঙাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। তবে সাফল্য খুব বড় ব্যাপার। সফলতা পেতে হলে একটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। এই দীর্ঘ পথচলায় পড়াশোনা, পরিশ্রম করতে করতে ভালো আইনজীবী হওয়ার দিকগুলো রপ্ত হয়ে যায় বলে আমি মনে করি।

নিগার সুলতানা: নতুন প্রজন্মের অনেকেই আইন পেশায় আসছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। আমি নবাগতদের উদ্দেশ্যে বলবো, ধৈর্য্য ধরে এ পেশায় লেগে থাকুন। অবশ্যই সফল হবেন। শুধু আইন পেশা কেন, যে কোন পেশায় সফল হতে হলে পরিশ্রম ও পড়াশোনার বিকল্প নেই।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা