• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

দোলনচাঁপায় স্বস্তি নারীদের

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি শহর ঢাকায় চলতে ফিরতে ভোগান্তি। বিশেষ করে নারীদের হয়রানি ও ভোগান্তির সেই মাত্রাটাও অনেক বেশি। নিরাপদ নারীবান্ধব শহরের তালিকায় না থাকা ঢাকা শহরে গণপরিবহনে যাতায়াতে অনিরাপদ অনুভব করেন নারীরা। 

নারী যাত্রীরা বলছেন, গণপরিবহনে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা তিক্ত ও কখনো কখনো ভয়ঙ্কর। এমন কী চালকের সহকারীরা ওঠা-নামা করার সময় গায়ে হাতও দেন। পুরুষ সহযাত্রীর হাতেও হেনস্তা হতে হয়। এছাড়া সিট নেই বলে নারী যাত্রীদের বাসে উঠতে দেওয়া হয় না। তাই নারীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাসের সংখ্যা বাড়ালে ভোগান্তি-হয়রানি কমবে। 

তথ্য মতে, রাজধানীতে নারীদের জন্য বেসরকারি র‌্যাংগস গ্রুপের দোলনচাঁপা নামে চারটি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ১২টি বাস চলাচল করে। তবে, তাও অনিয়মিত বলে জানান চলাচলরত নারীরা। 

যদিও বাস সংখ্যা নগন্য, অল্প কয়েকটি রুটে চলে সেই বাস, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় সেই বাসের জন্য। তারপরও সেই বাসে যাতায়াতেই নিরাপদ অনুভব করেন নারীরা। ফলে মহিলা বাসেই আস্থা নারীদের। 
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৭টা মিরপুর এলাকায় ইসিবি চত্বরে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষায় শাহানা আক্তার। তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে ফার্মগেট যাবেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েও গন্তব্যে যেতে পছন্দসই বাস না পেয়ে চিন্তিত শাহানা। এ সময় বেগুনি রঙের দোলনচাঁপা বাস এসে দাঁড়ালো। তখনই মা-মেয়ে দ্রুত ওঠে পড়েন। 

শাহানা আক্তার বলেন, অন্য বাসে যখন ভিড়ের জন্য ওঠা দায়, তখন এটাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যায়। 
একইদিন সকাল সোয়া ৮টা। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা। অনেক যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেক বাস যাত্রী নিয়ে এসে থামছে, আবার যাত্রী উঠিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু নারী যাত্রী কোনো বাসের ওঠার চেষ্টা করছে না। কেন? তারা বাসে ওঠছেন না। তারা জানালেন, মহিলা বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। 

এমনই একজন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা তানজিলা ইসলাম জিনাত। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন মহিলা বাসের জন্য। বাসটি এসে পৌঁছালে কিছুটা পথ দৌড়ে হলেও ওঠার চেষ্টা করেন। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, সবচেয়ে স্বস্তির কথা হলো, মহিলা বাসে হয়রানির শিকার হওয়ার ভয় নেই। 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা তাসফিয়া হক। তিনি বলেন, মহিলা বাসে ধাক্কাধাক্কি নেই, সিট মেলে। আর ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার ভয় নেই। 

আবিদা সুলতানা নামে এক যাত্রী বলেন, নারীরা এখন নানামুখী কাজে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু নারীদের যাতায়াতে বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ধরনের বাসের সংখ্যা আরও বাড়ালে নারীদের চলাচল সহজ হবে। শুধু এসব নারী নয়, সব নারী যাত্রীর অনুভূতিও একই।কথা বলতে বলতে বাস আসার সময় সকাল সাড়ে ৮টা পার। কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত বাসের দেখা মিললো না। সময় যখন ঘড়ির কাটায় পৌনে ৯টা। তখনই দোলনচাঁপা বাসের দেখা মিললো। বাস আসতেই স্বাচ্ছন্দ্যে ওঠে গন্তব্যে চলে গেলেন এই নারীরা। 

বাসে দেখা গেলো, যাত্রীতে ভরপুর। কোনো আসনই ফাঁকা নেই। তবে মহিলা বাস হলেও চালক পুরুষ। তাই নারীরা কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা নারীদের বাসে নারীচালক নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান। 

তথ্য মতে, রাজধানীর নারীদের যাতায়াত সেবা দিতে ২০১৮ সালের ২ জুন মিরপুর-১২ নম্বর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দোলনচাঁপা নামে একটি বাস চালু করে র‌্যাংগস গ্রুপ ও ভারতীয় ভলভো আইশার ভেহিক্যাল লিমিটেড। পরবর্তীতে নারী যাত্রীদের আগ্রহের কারণে বাস বাড়ানো হয়। দু’রুটে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাসগুলো চলে। 

দোলনচাঁপা বাস সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে মিরপুর-১২ নম্বর ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে মতিঝিল ও আজিমপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এজন্য যাত্রীকে দূরত্বভেদে ভাড়া দিতে হয় ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা। 

দোলনচাঁপা কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বাসে ৪টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ও একটি হেলপলাইন নম্বরও রয়েছে। অগ্নি নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রও রাখা আছে। 

দোলনচাঁপা বাসচালকের সহকারীর হিসেবে আসমা বেগম বলেন, বাসে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। সকালে-সন্ধ্যায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি থাকে।

র‌্যাংগস মোটরস লিমিটেডের দোলনচাঁপা প্রকল্প তদারকি কর্মকর্তা শামিতা তাবাসসুম বলেন, বাসের সেবা নেওয়ার হার বাড়লে পর্যায়ক্রমে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা