• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০১৯  

দেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধ দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এতে নিঃসন্দেহে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিশ্বের ১৫০টি দেশে ওষুধ রফতানিও হচ্ছে, যার মোট প্রবৃদ্ধি বছরে ১০ শতাংশ। ওষুধ শিল্পের বাজারও কম নয়, প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ বাজার। অন্যদিকে ওষুধ রফতানি করে আয় হচ্ছে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ কর্তৃক বাংলাদেশের কিছু ওষুধ অনুমোদনপ্রাপ্ত। তবে দুঃখের বিষয় হলো, দেশে ওষুধ শিল্পের প্রভূত উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটলেও এর কাঁচামাল অদ্যাবধি প্রস্তুত হয় না। ওষুধশিল্পে ব্যবহৃত ৪১ রকমের কাঁচামালের মধ্যে মাত্র ৩-৪ শতাংশ উৎপাদন করে দেশীয় ৮টি কোম্পানি। এর বাইরে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা, প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যয় করতে হচ্ছে কাঁচামাল আমদানিতে। এ নিয়ে তেমন গবেষণাও হয় না দেশে। ফলে ওষুধ খাতের বিকাশ ঘটলেও জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনের হার তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। কাঁচামাল আমদানির ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতার অন্য একটি দিকও রয়েছে। সেটা হলোÑ ২০২৭ সাল নাগাদ বালাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে ট্রিপস চুক্তির আওতায় সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। অর্থাৎ ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের যে আনুকূল্য পাচ্ছে এখন, তা থাকবে না। ফলে তখন ওষুধের দাম আরও বাড়বে। উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ ওষুদের উচ্চমূল্য ভোক্তাসাধারণের দুশ্চিন্তা ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পাশাপাশি নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের দৌরাত্ম্যও আছে, যা শুধু গ্রাম-গঞ্জে নয়, রাজধানীতেও মেলে হামেশাই। মাঝে মধ্যেই সেসব ওষুধ জব্দ করাসহ জরিমানার খবরও মেলে। বেশ কয়েক বছর আগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য এপিআই বা এ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্স তৈরির নিমিত্ত শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও, তা ঝুলে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। যা হোক, টেকসই এপিআই খাতের জরুরী বিকাশে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগসহ এক্ষেত্রে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, শুল্কমুক্ত সুবিধা, অবকাঠামো নির্মাণসহ ওষুধ নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরী ও অপরিহার্য।

দেশে ওষুধ শিল্পের বিকাশ ঘটলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতটিতে এখনও নানামুখী সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধ শিল্প বেসরকারী বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানসম্মত অনেক ওষুধ কারখানাও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর নি¤œমানের ভেজাল ওষুধ কারখানা। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কবলে পড়ে ভেজাল, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে সয়লাব হচ্ছে দেশ। এতে স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হচ্ছে। জীবন রক্ষায় ওষুধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানহীন ও ভেজাল ওষুধ এখন যেন জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয় কিন্তু আইনের দুর্বলতা এবং সুনির্দিষ্ট ওষুধ নীতিমালা না থাকার কারণে তা রোধ করা যাচ্ছে না। জাতীয় ওষুধনীতি-২০১৬ প্রণীত হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধে অগ্রগতি নেই। শুধু নীতিমালা করলেই হবে না, নীতিমালা অনুযায়ী আইনও থাকা জরুরী। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে আইন আছে, অথচ বাস্তবাযন নেই। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ প্রশাসন ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে না। এতে কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছামতো মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এই ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন থাকা দরকার। সরকার কর্তৃক সকল ধরনের ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। দেশের সব ওষুধ কোম্পানি যাতে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করে, তাও নিশ্চিত করা দরকার। ওষুধের দোকানে ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, লাইসেন্সবিহীন দোকানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। জেলাভিত্তিক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অফিস স্থাপন করার বিধান রাখা উচিত। এতে সর্বক্ষণিক তদারকি করলে জনগণ মানসম্মত ওষুধ পাবে। কমবে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি। জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ, সে ওষুধের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য ওষুধ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। দেশেই ওষুধ শিল্পের অপরিহার্য উপাদান কাঁচামাল উৎপাদিত হলে এসবের উৎপাত-উপদ্রব কমবে নিঃসন্দেহে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা