• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের খুলনা

এটিএম বুথে জাল টাকা কেন?

আজকের খুলনা

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

ব্যাংকের এটিএম বুথে জাল ও ছেঁড়া টাকা পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্রাহক ভোগান্তি এড়াতে এটিএম বুথের সেবা আরও যুগোপযোগী ও গ্রাহকবান্ধব করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে জাল ও ছেঁড়া টাকার নোট যেন কোনো অবস্থাতেই এটিএম বুথে না পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ব্যাংকের বুথে জাল ও ছেঁড়া টাকা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকারও মিলছে না। ভোগান্তিতে পড়া রহমান বলেন, গত ৬ অক্টোবর ইউসিবির ভিসা কার্ড দিয়ে ব্যাংক এশিয়ার এলিফ্যান্ট রোডের বুথ থেকে টাকা তুললে ছেঁড়া নোট বের হয়। নোটের কোনার ছোট একটা অংশ ছিল না। সেখানে আলাদা কাগজের টুকরা লাগানো ছিল। সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে তারা বলে, ‘আপনার উচিত ছিল বুথের ক্যামেরার সামনে নোটটা ধরে রাখা। যেহেতু করেননি তাহলে নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যান, তারা নোটের অবস্থা দেখে বলতে পারবেন এবং বদলে দিতে পারেন। কিন্তু পাশে কোনো শাখা না পাওয়ায় আমি বদলাতে পারিনি।’

 ব্যাংকের এটিএম বুথে জাল ও ছেঁড়া টাকা পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্রাহক ভোগান্তি এড়াতে এটিএম বুথের সেবা আরও যুগোপযোগী ও গ্রাহকবান্ধব করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে জাল ও ছেঁড়া টাকার নোট যেন কোনো অবস্থাতেই এটিএম বুথে না পাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ব্যাংকের বুথে জাল ও ছেঁড়া টাকা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, ‘ত্রুটি নোট বুথের ক্যামেরার সামনে ধরা, সংশ্লিষ্টদের জানানো- এত ঝামেলা না করে সেবা উন্নত করলেই পারে। কারণ তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা। সবাই তা-ই করে। এ কারণে ব্যাংকের উচিত বুথে জাল, ছেঁড়া ও ত্রুটিপূর্ণ নোট না রাখা। তাহলে গ্রাহক এ ধরনের সমস্যায় পড়বে না।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনের তাগিদে এটিএম বুথে লেনদেন বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে ভোগান্তিও। কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া, বুথে জাল ও ছেঁড়া নোট, সবসময় পর্যাপ্ত টাকা না থাকাসহ নানা জটিলতা রয়েছে এটিএম বুথগুলোতে। যেহেতু গ্রাহক তাৎক্ষণিকভাবে লেনদেন করেন তা-ই সেবার মান নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।

জাল টাকা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এই জালিয়াত চক্র বর্তমানে ব্যাপকহারে তাদের জাল বিস্তার করেছে। অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তারা টাকা জাল করে বাজারে ছাড়ছে। দেখতে হুবহু আসলের মতো। কিন্তু পুরোটাই নকল। সারাদেশে অনেক জাল টাকা তৈরির কারখানার খবরও ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। জানা যায় টাকা জাল করার প্রতিটি কারখানায় ঘণ্টায় প্রায় দু`লাখ টাকার জাল নোট তৈরি হয়। ব্যাপক হারে এসব নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

এসব অপরাধীদের অনেককে পাকড়াও করা হলেও তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আইনের ফাঁক থাকায় এই ঘৃণ্য অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আর এভাবেই জালিয়াত চক্র সহজেই বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে কিভাবে জালিয়াত চক্রের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায় যাতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সাহস না পায়।

জাল নোটের অবারিত বিস্তারে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। ফলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে দেশের কাগুজে মুদ্রার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ভাবতে হবে। জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, কিছু জঙ্গী সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ হয় এই জাল টাকা দিয়ে। জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে না পারলে বিপর্যস্ত হবে সাধারণ মানুষের জীবন।

এ পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিং-এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন। বিশেষ করে এটিএম বুথে জাল টাকা বন্ধ করতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থায় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে মেশিনে আসল নকল বোঝার সুযোগ নেই। এই মেশিন ছাড়াও কি দেখে নকল টাকা চেনা যাবে সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে গণমাধ্যমে।

আজকের খুলনা
আজকের খুলনা